কুনো ন্যাশনাল পার্কে পাঁচ শাবকের জন্ম দিল চিতা নির্ভা

মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে (Kuno National Park) চিতা নির্ভা (Cheetah Nirva) পাঁচটি শাবকের জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। এই নতুন শাবকদের জন্মের ফলে…

Cheetah Nirva Gives Birth to Five Cubs at Kuno National Park

মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে (Kuno National Park) চিতা নির্ভা (Cheetah Nirva) পাঁচটি শাবকের জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। এই নতুন শাবকদের জন্মের ফলে শিওপুর জেলার কুনো ন্যাশনাল পার্কে চিতা ও তাদের শাবকের মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯। এই মাসের শুরুতে, এই সংরক্ষিত বন থেকে দুটি চিতাকে গান্ধী সাগর অভয়ারণ্যে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। বর্তমানে, শাবক সহ দেশে চিতার মোট সংখ্যা ৩১।

রবিবার রাতে এক্স-এ একটি পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী যাদব বলেন, “কুনো ন্যাশনাল পার্কে চিতার জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটি একটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সম্প্রতি, পাঁচ বছর বয়সী চিতা নির্ভা পাঁচটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। এই ছোট্ট শাবকদের আগমন চিতা প্রকল্পের সাফল্য এবং ভারতের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের প্রতীক।” তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সৃষ্ট অনুকূল পরিবেশ এখন ফলপ্রসূ হচ্ছে।

   

এই ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য কুনো ন্যাশনাল পার্কের সমগ্র দল, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং সংরক্ষণে নিয়োজিত প্রতিটি কঠোর পরিশ্রমী সহযোগীকে মুখ্যমন্ত্রী হৃদয়গ্রাহী অভিনন্দন জানিয়েছেন।

গত ২০ এপ্রিল, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্থানান্তরিত দুটি চিতা, প্রভাস এবং পবক, যারা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কুনোতে ছিল, তাদের নিমচ এবং মান্দসৌর জেলার গান্ধী সাগর অভয়ারণ্যে মুক্ত করা হয়।

২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা—পাঁচটি মাদী এবং তিনটি পুরুষ—কুনো ন্যাশনাল পার্কে মুক্ত করা হয়েছিল, যা এই বড় বিড়ালের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় স্থানান্তর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এরপর, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ১২টি চিতা কুনোতে আনা হয়। এই পাঁচটি শাবকের জন্মের আগে, পার্কে ২৪টি চিতা ছিল, যার মধ্যে ১৪টি ভারতে জন্মগ্রহণকারী শাবক। এর মধ্যে দুটি চিতা এখন গান্ধী সাগর অভয়ারণ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে।

ভারতে চিতা পুনর্বাসন প্রকল্প, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছিল, দেশের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভারত থেকে চিতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ১৯৪৭ সালে, এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই দ্রুতগামী প্রাণীটিকে পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা শুরু হয়। নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতা আমদানি এবং তাদের কুনোর মতো উপযুক্ত আবাসস্থলে মুক্ত করা এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য।

Advertisements

কুনো ন্যাশনাল পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশ চিতাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার ঘাসজমি, বনভূমি এবং শিকারের প্রাচুর্য চিতাদের বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ পরিবেশ প্রদান করে। নির্ভার শাবকদের জন্ম এই প্রকল্পের সাফল্যের একটি বড় প্রমাণ, যা দেখায় যে চিতারা কেবল বেঁচে থাকছে না, বরং প্রজনন করছে এবং তাদের জনসংখ্যা বাড়াচ্ছে।

চিতা পুনর্বাসন প্রকল্প সাফল্যের পথে এগিয়ে গেলেও এর পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চিতাদের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, শিকারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে সংঘাত এড়ানো এই প্রকল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও, চিতাদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং জিনগত বৈচিত্র্য বজায় রাখা দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কুনো ন্যাশনাল পার্কের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং পরিচালনা দল এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন রেডিও কলারের মাধ্যমে চিতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে আবাসস্থল বিশ্লেষণ, এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

কুনো ন্যাশনাল পার্কে চিতার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে, তাদের জন্য আরও আবাসস্থলের প্রয়োজন হয়েছে। গান্ধী সাগর অভয়ারণ্যে দুটি চিতার স্থানান্তর এই দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই অভয়ারণ্যটি নিমচ এবং মান্দসৌর জেলায় বিস্তৃত এবং চিতাদের জন্য একটি নিরাপদ এবং উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। এই স্থানান্তর কুনোর উপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে এবং চিতাদের জন্য আরও বিস্তৃত আবাসস্থল নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

চিতা পুনর্বাসন প্রকল্প ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। নির্ভার শাবকদের জন্ম এই প্রকল্পের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতে, আরও চিতা আমদানি এবং অন্যান্য উপযুক্ত অভয়ারণ্যে তাদের স্থানান্তরের মাধ্যমে এই প্রকল্প আরও বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়াও, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এই প্রকল্পে সম্পৃক্ত করা এবং তাদের মাধ্যমে পর্যটনের প্রসার ভারতের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

কুনো ন্যাশনাল পার্কে চিতা নির্ভার পাঁচটি শাবকের জন্ম ভারতের চিতা পুনর্বাসন প্রকল্পের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই সাফল্য কেবল দেশের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতিই প্রকাশ করে না, বরং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ভারতের দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। কুনোর দল, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা এই প্রকল্পকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে, এই প্রকল্প আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়বে এবং ভারতের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে।