রথযাত্রার আগে পুরীর মন্দিরে মোদক চুরি, চাঞ্চল্য শ্রীক্ষেত্রে

পুরী: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই জগন্নাথদেবের রথযাত্রা (Rath Yatra)। তার আগে একের পর এক বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকছে পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির। কয়েক মাস আগেই চিলে…

Puri Sri Jagannath Temple Ratna Bhandar

পুরী: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই জগন্নাথদেবের রথযাত্রা (Rath Yatra)। তার আগে একের পর এক বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকছে পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির। কয়েক মাস আগেই চিলে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মন্দিরের মাথার পবিত্র ধ্বজ। কিছুদিন আগেই নিয়ম ভেঙে ড্রোন উড়ে ঢুকে পড়েছিল মন্দির চত্বরে। এবার সামনে এল আরও বড় চাঞ্চল্যকর খবর— ভগবান জগন্নাথের জন্য নির্দিষ্ট ঔষধি প্রসাদ ‘দশমূল মোদক’-এর ৭০টি লাড্ডু গায়েব হয়ে গেছে।

মন্দির সূত্রে জানা গেছে, এই মোদকগুলি আয়ুর্বেদিক উপাদান দিয়ে তৈরি একটি পবিত্র নৈবেদ্য। প্রতিবছর স্নান পূর্ণিমার পর, যখন জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রা স্নান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে বিশ্বাস করা হয়, তখন তাঁদের আরোগ্য কামনায় এই দশমূল মোদক উৎসর্গ করা হয়। রাজ বৈদ্যের নির্দেশে মোট ৩১৩টি অমুনিয়া মোদক তৈরি করে নির্দিষ্ট কক্ষে রাখা হয়েছিল দেবতার উদ্দেশ্যে অর্পণের জন্য।

   

ঘটনাটি ঘটেছে অনাবসর একাদশীর রাতে, ২১ জুন। ঠিক তখনই লক্ষ করা যায়, ওই নির্ধারিত ঘর থেকে ৭০টি মোদক গায়েব হয়ে গেছে। প্রথমে বিষয়টি নজরে আনেন বলভদ্রদেবের সেবায়েত হলধর দাস মহাপাত্র। তিনি সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল শুরু করেন এবং শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের (SJTA) প্রধান প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

তবে এখনও পর্যন্ত মন্দির প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই চুরির ঘটনা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। ঠিক কীভাবে বা কারা এই নৈবেদ্য সরাল, তা নিয়েও নেই কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা। বিষয়টি নিয়ে ওড়িশার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই উত্তাল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

মোদকের এই চুরির ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে মন্দিরের নিরাপত্তা, পবিত্রতা ও আচার-অনুষ্ঠানের উপর। এই দশমূল মোদক শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি জগন্নাথদেবের শারীরিক আরোগ্যের প্রতীক। দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা রীতি অনুযায়ী এই ঔষধি লাড্ডু ভগবানের জন্য অর্পিত হয়। তাই এই চুরির ঘটনা মন্দিরের পরম্পরা ও পবিত্রতায় বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন ভক্ত এবং পণ্ডিত মহল।

Advertisements

শুধু তাই নয়, মন্দিরের অভ্যন্তরে এত কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও কীভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটল, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি নিছক চুরি, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনও গভীর ষড়যন্ত্র?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনা রথযাত্রার ঠিক আগে হলে তা জনমনে ভক্তি এবং আস্থার উপর বড় ধাক্কা দিতে পারে। রথযাত্রা যেমন ওড়িশার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, তেমনি দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সময়ে ভিড় করেন পুরীধামে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা এবং মন্দির পরিচালনার গাফিলতি নিয়ে প্রশাসনকেই জবাবদিহি করতে হতে পারে।

বর্তমানে তদন্তের দাবি জোরদার হচ্ছে পুরীজুড়ে। প্রশাসন যদি দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের না করে, তাহলে ভক্তদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে। আর সেটা রথযাত্রার মতো আন্তর্জাতিক ধর্মীয় উৎসবের আগে একেবারেই কাম্য নয় বলেই মনে করছেন মন্দিরের সেবায়েত এবং ওড়িশার সাংস্কৃতিক মহল।