নয়াদিল্লি: ভারতের মহাকাশ ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লেখার দিকে এগোচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (Chandrayaan 4)। ২০২৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎক্ষেপিত হতে চলেছে বহুল প্রতীক্ষিত চন্দ্রযান–৪ মিশন, যা হতে পারে ভারতের প্রথম “স্যাম্পল রিটার্ন মিশন”—অর্থাৎ চাঁদের মাটির নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার অভিযানে ভারত হাত দিতে চলেছে। ভারতের জন্য এই পদক্ষেপ শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং বৈজ্ঞানিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও এক বড় মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চন্দ্রযান–৩ এর সাফল্য ভারতের বিজ্ঞান ও গবেষণার ওপর বিশ্বজুড়ে আস্থা বাড়িয়েছে। এবার চন্দ্রযান–৪ সেই সাফল্যকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা। ইসরোর বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, এই মিশনে থাকবে বহু স্তরের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ল্যান্ডার, রোভার, অ্যাসেন্ট ভেহিকল ও অরবিটার সবকিছু একটাই মিশনের অংশ। লক্ষ্য একটাই চাঁদে অবতরণ করা, নমুনা সংগ্রহ করা, এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা।
রয়েছে জল প্রতিরোধ ব্যবস্থা, Motorola Edge 50 Pro ছয় হাজার সস্তা হল
বিশেষজ্ঞদের মতে, নমুনা রিটার্ন মিশন সাধারণ চন্দ্রাভিযানের থেকে অনেক বেশি জটিল। কারণ এতে অবতরণ, অনুসন্ধান এবং তারপর চাঁদ থেকে উড্ডয়ন এই তিনটি দুঃসাধ্য ধাপ পাড়ি দিতে হয়। এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এই প্রযুক্তি রপ্ত করতে পেরেছে। তাই চন্দ্রযান–৪ সফল হলে ভারত হবে বিশ্বের চতুর্থ দেশ যে চাঁদের মাটি পৃথিবীতে এনে বিশ্লেষণ করতে পারবে।
এদিকে, ইসরো শুধু সরকারি মহাকাশ সংস্থার সীমায় আটকে নেই। গত কয়েক বছরে ভারতের মহাকাশ খাতে বিপুল গতি এসেছে বেসরকারি শিল্পকে এগিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। স্কাইরুট, অগ্নিকুল, বেলাট্রিক্সের মতো স্টার্টআপ ও শিল্প সংস্থাগুলি এখন ইসরোর গতিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ভারতের নতুন স্পেস পলিসি মহাকাশ–উৎপাদন ও স্যাটেলাইট বাণিজ্যের জন্য নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের স্যাটেলাইট লঞ্চ পরিষেবার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
তার উপর রয়েছে আরেকটি অপেক্ষারত বড় মিশন লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন মিশন (LUPEX), যা জাপান–ভারত যৌথভাবে পরিচালনা করবে। এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে জলবরফের উপস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। চন্দ্রযান–৩ সেই অঞ্চলে পৌঁছে যে দুঃসাহস দেখিয়েছে, LUPEX সেই অনুসন্ধানকে আরও গভীর করবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পর্যাপ্ত জলবরফ পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে মানব–অভিযান, চন্দ্র–স্টেশন, জ্বালানি উৎপাদন এবং মহাকাশ–বাস্তবতার মতো ধারণাগুলি অনেকটাই বাস্তবায়িত হতে পারবে। ফলে ভারতের এই ধারাবাহিক কাজ শুধু দেশের গৌরব নয়, ভবিষ্যতের মানব সভ্যতার মহাকাশ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ইসরো চেয়ারম্যান এস. সোমনাথ নিজেও জানিয়েছেন “ভারতের মহাকাশযাত্রা এখন আর শুধু সাফল্যের গল্প নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বের প্রতীক। আমরা নতুন সীমা ছুঁতে প্রস্তুত।” চন্দ্রযান–৪, LUPEX এবং বেসরকারি মহাকাশ শিল্পের উত্থান মিলিয়ে ভারত আজ মহাকাশশক্তি হিসেবে এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে।

