কমতে থাকা জন্মহারে উদ্বেগে চন্দ্রবাবু নাইডু

অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু সম্প্রতি ক্রমহ্রাসমান জন্মহার (Declining Birth Rate) নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে, জন্মহার কমার ফলে ভারত একটি…

Chandrababu Naidu Raises Alarm Over Declining Birth Rate

অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু সম্প্রতি ক্রমহ্রাসমান জন্মহার (Declining Birth Rate) নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে, জন্মহার কমার ফলে ভারত একটি বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। এক অনুষ্ঠানে তিনি উল্লেখ করেন যে, অনেক দম্পতি এখন সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন এবং ব্যক্তিগত সম্পদ ও আর্থিক স্থিতিশীলতাকে পরিবার গঠনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, “আমাদের সমাজে সন্তান জন্মদানের প্রতি অনীহা বাড়ছে। দম্পতিরা আজকাল তাদের ব্যক্তিগত চাহিদা এবং আর্থিক সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে দেশের জনসংখ্যার ভারসাম্য এবং অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলবে।”

দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উদাহরণ
নাইডু দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উদাহরণ টেনে বলেন যে, এই দেশগুলো কম জন্মহারের ফলে যে সংকটে পড়েছে, তা ভারতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, “জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো জন্মহার কমার কারণে কর্মক্ষম জনসংখ্যার ঘাটতির মুখে পড়েছে। তাদের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ছে, এবং বয়স্ক জনসংখ্যার জন্য বাড়তি স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।”

দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম, যেখানে প্রতি নারীতে মাত্র ০.৭৮ সন্তানের জন্ম হচ্ছে। একইভাবে, জাপানের দীর্ঘমেয়াদী জন্মহার কম থাকায় সেখানে জনসংখ্যার বার্ধক্যজনিত সমস্যা বাড়ছে। নাইডু মনে করেন, ভারত যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভবিষ্যতে একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

অন্ধ্র প্রদেশের বর্তমান পরিস্থিতি
অন্ধ্র প্রদেশেও জন্মহার ক্রমশ কমছে, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জনসংখ্যাগত কাঠামোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নাইডু বলেন, “যদি আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাস পাবে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করবে।”

তিনি আরও বলেন, জন্মহার বাড়ানোর জন্য শুধুমাত্র সরকারি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। পরিবার গঠনের সামাজিক গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

Advertisements

সমস্যার সমাধানে প্রস্তাব
এই সংকট মোকাবিলায় চন্দ্রবাবু নাইডু কয়েকটি সুস্পষ্ট পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে,
1. সচেতনতা প্রচারণা চালানো: জন্মহার কমার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
2. আর্থিক সহায়তা প্রদান: সন্তান জন্মানোর ক্ষেত্রে দম্পতিদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা এবং সুবিধা প্রদান করা।
3. পারিবারিক সমর্থন ব্যবস্থা উন্নত করা: কর্মজীবী পিতামাতার জন্য যথাযথ মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং কর্মক্ষেত্রে শিশুসেবার সুযোগ তৈরি করা।
4. উন্নত পরিবার পরিকল্পনা নীতি: ভারসাম্যপূর্ণ পরিবার পরিকল্পনা নীতির মাধ্যমে জন্মহার নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ভারতের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
জাতীয় পর্যায়ে ভারতের জন্মহারও ধীরে ধীরে কমছে। সাম্প্রতিক জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (NFHS) অনুযায়ী, ভারতের মোট উর্বরতার হার প্রতি নারী ২.০ জনে নেমে এসেছে, যা “জনসংখ্যা প্রতিস্থাপন” হারের নিচে। এই প্রবণতা যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তবে তা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো এবং জনসংখ্যার ভারসাম্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

চন্দ্রবাবু নাইডুর উদ্বেগ ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। তিনি যে বিষয়ে সতর্ক করেছেন, তা শুধুমাত্র অন্ধ্র প্রদেশের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের ভবিষ্যতের জন্যই প্রাসঙ্গিক। জন্মহার কমার এই প্রবণতা যদি এখনই নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তবে তা দেশের অর্থনীতি এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, এখনই প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন।