চণ্ডীগড়: ভারতের শহরগুলোর উন্নয়ন এবং পরিকল্পনার ক্ষেত্রে চণ্ডীগড় একটি নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। শহরের শেষ বস্তি শাহপুর কলোনি ধ্বংস হওয়ার পর চণ্ডীগড় আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের প্রথম ‘বস্তিমুক্ত’ শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি স্থানীয় প্রশাসনের বারো বছরের এক অবিরাম প্রচেষ্টার ফল, যার লক্ষ্য ছিল বস্তি উচ্ছেদ করে মূল্যবান সরকারি জমি উদ্ধার করা।
প্রসঙ্গত, এই অভিযানের মাধ্যমে মোট ৫২০ একর জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, যা শহরের বিস্তৃতি ও উন্নত নগর পরিকল্পনার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। ডেপুটি কমিশনার নিশান্ত কুমার যাদব জানিয়েছিলেন, “শাহপুর কলোনি ধ্বংস আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ধ্বংসের মাধ্যমে আরও পাঁচ একর জমি শহরের জন্য মুক্ত হয়েছে।”
শহরের শেষ বস্তি ধ্বংসের প্রক্রিয়া
শাহপুর কলোনি উচ্ছেদের কাজ শুরু হয় ২৯ সেপ্টেম্বর, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন যাতে কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। কোনও বড় বিঘ্ন ছাড়াই জমি খালি করা হয়েছে। এর সঙ্গে চণ্ডীগড়ের বস্তি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা হল।
দশকের আগের প্রচেষ্টার গল্প Chandigarh Slum Free City
চণ্ডীগড়ের বস্তি উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছিল এক দশকেরও বেশি আগে। ধাপে ধাপে শহরের কয়েকটি বড় কলোনি ধ্বংস করা হয়েছে। ২০১৪ সালে কল্পনা কলোনি (Kalyan Colony) থেকে ৮৯ একর জমি পুনরুদ্ধার করা হয়। একই বছরে অম্বেদকর কলোনি ধ্বংস হয়ে আরও ৬৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে কলোনি নং ৪ থেকে ৬৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়।
জমির মূল্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সাংবাদিকদের জানান, এই বছরের মধ্যে শাহপুর-সহ অন্যান্য কলোনি ধ্বংসের মাধ্যমে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কলোনিগুলো যেমন আদর্শ কলোনি, সেক্টর ২৫ কলোনি, এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার সঞ্জয় কলোনিও ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রশাসনের আশা, উদ্ধারকৃত জমি শহরের নতুন উন্নয়ন, অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হবে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
চণ্ডীগড়ের এই ঘোষণা সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ এই উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন, কেউ আবার উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেছেন, “তাদের কোথায় স্থানান্তর করা হয়েছে?” আরেকজন লিখেছেন, “এটা আসলে বস্তিমুক্ত নয়, শুধু বস্তি ধ্বংস করা হয়েছে পুনর্বাসন ছাড়া।” কিন্তু অনেকেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন মন্তব্য করেছেন, “চণ্ডীগড় এখন ভারতীয় শহরগুলোর জন্য উদাহরণ স্থাপন করছে, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি সম্ভব।” আরেকজন লিখেছেন, “চণ্ডীগড় এখন বস্তিমুক্ত, চমৎকার অগ্রগতি। আশা করি সবাইকে ভালো নতুন ঘর দেওয়া হয়েছে।”
চণ্ডীগড়ের এই অর্জন ভারতের শহুরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে—একটি শহর যেখানে পরিকল্পনা, নিরাপত্তা এবং নাগরিক সুবিধার সমন্বয় করে সকলের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।