কেন্দ্র সরকার তফসিলি জাতি (Scheduled Communities), তফসিলি উপজাতি (এসটি) এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণি (ওবিসি) সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে একাধিক নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) অধীনে এই উদ্যোগগুলি গ্রামীণ, উপজাতি অধ্যুষিত এবং পাহাড়ি এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে ত্রিস্তরীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, মোবাইল মেডিকেল ইউনিট, এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জন্য প্রণোদনা। বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এনএইচএম-এর উদ্যোগ তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ত্রিস্তরীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা
কেন্দ্র সরকার তফসিলি ও পাহাড়ি এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার সমান প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ত্রিস্তরীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করেছে। এই ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (পিএইচসি), এবং কমিউনিটি হেলথ সেন্টার (সিএইচসি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উপজাতি ও পাহাড়ি এলাকার জন্য এই কেন্দ্রগুলি স্থাপনের নিয়ম শিথিল করা হয়েছে, যাতে দুর্গম এলাকায়ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যায়।
এই কেন্দ্রগুলি সাধারণ রোগের চিকিৎসা, টিকাদান, এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এই ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা বাড়িয়েছে এবং গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসার ব্যয় হ্রাস করেছে।”
চিকিৎসকদের জন্য প্রণোদনা ও সম্মানী
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনা ও সম্মানী প্রদান করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ডাক্তার, নার্স, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্গম উপজাতি অঞ্চলে কাজ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এই প্রণোদনার ফলে গ্রামীণ এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উপস্থিতি বেড়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করছে। এছাড়া, আশা কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সম্মানী বৃদ্ধি করে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।
মোবাইল মেডিকেল ইউনিটের ভূমিকা
এনএইচএম-এর অধীনে ১,৪৯৮টি মোবাইল মেডিকেল ইউনিট (এমএমইউ) পরিচালিত হচ্ছে, যা দুর্গম ও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এর মধ্যে ৬৯৪টি ইউনিট বিশেষভাবে সংবেদনশীল উপজাতি গোষ্ঠী (পিভিটিজি) অধ্যুষিত এলাকায় কাজ করছে।
এই মোবাইল ইউনিটগুলি চিকিৎসা, ডায়াগনস্টিক পরিষেবা, এবং ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। এই ইউনিটগুলি গ্রামীণ এলাকায় যেখানে স্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই, সেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করে। এর ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং সংক্রামক রোগের মতো সমস্যাগুলির প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে।
মা ও শিশু স্বাস্থ্যে উদ্যোগ
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এসসি, এসটি, এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের মধ্যে মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার কমাতে এনএইচএম বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছে। জননী সুরক্ষা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা, এবং আশা কর্মীদের মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং টিকাদান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মোবাইল মেডিকেল ইউনিটগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রসবপূর্ব ও প্রসবোত্তর সেবা প্রদান করছে। এছাড়া, নবজাতকদের জন্য টিকাদান এবং পুষ্টি সংক্রান্ত কর্মসূচি চালানো হচ্ছে, যা শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক হয়েছে।
জয়েন্ট ইস্যুতে হাই কোর্টের রায় মানছে না রাজ্য, দ্বারস্থ সুপ্রিম কোর্ট
সামাজিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য
এই উদ্যোগগুলি তফসিলি সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সমতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতের গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে, স্বাস্থ্যসেবার অভাব দীর্ঘদিনের সমস্যা।
এনএইচএম-এর এই পদক্ষেপগুলি সেই ব্যবধান কমাতে সহায়ক হয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে স্থানীয় স্তরে বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের উপর। এছাড়া, স্থানীয় সম্প্রদায়ের সচেতনতা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি তাদের আস্থা তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্র সরকারের তফসিলি গোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের এই পদক্ষেপগুলি গ্রামীণ ও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। ত্রিস্তরীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, মোবাইল মেডিকেল ইউনিট, এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যে বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে এনএইচএম সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করছে। এই পদক্ষেপগুলি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে, তফসিলি সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য কমবে।