ভারত সরকার অনলাইন গেমিং অ্যাপে (Gaming Apps) নগদ লেনদেন নিষিদ্ধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে। প্রস্তাবিত ‘অনলাইন গেমিং নিয়ন্ত্রণ ও প্রচার আইন’ অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিয়েল-মানি গেমিংয়ের জন্য কোনো তহবিল স্থানান্তর বা প্রক্রিয়াকরণের অনুমতি দেওয়া হবে না।
এই খবরটি সূত্রের বরাতে ১৯ আগস্ট, ২০২৫-এ প্রকাশিত হয়েছে। এই বিলটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে এবং শীঘ্রই লোকসভায় উত্থাপিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার অনলাইন জুয়া এবং বেটিং নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, যা দেশে দ্রুত বাড়ছে।
প্রস্তাবিত আইনের অধীনে, রিয়েল-মানি গেমিংয়ের জন্য কোনো ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ লেনদেনের অনুমতি দিতে পারবে না। এছাড়া, এই বিলে রিয়েল-মানি গেমিংয়ের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে, ই-স্পোর্টস এবং নন-মানিটারি দক্ষতা-ভিত্তিক গেমগুলোর প্রচার অব্যাহত থাকবে।
অবৈধ বা নিবন্ধিত গেমিং প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (MeitY) অনলাইন গেমিং খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করবে। এই বিলের মূল উদ্দেশ্য হলো অবৈধ জুয়া এবং বেটিং প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করা এবং গেমিং শিল্পে স্বচ্ছতা আনা।
ভারতের অনলাইন গেমিং শিল্প বর্তমানে ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের বাজার, এবং এটি ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, অবৈধ গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে এই শিল্পে অর্থ পাচার, জালিয়াতি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির মতো সমস্যা বাড়ছে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১,৪০০-এর বেশি অবৈধ বেটিং এবং জুয়ার ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে।
এই অ্যাপগুলো প্রায়ই হাওয়ালা, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অন্যান্য অবৈধ পথে অর্থ স্থানান্তর করত। উদাহরণস্বরূপ, মহাদেব, প্যারিম্যাচ, ফেয়ারপ্লে, এবং ১এক্সবেট-এর মতো অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো প্রায়ই ভারতীয় আইন মেনে চলত না এবং ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব ছিল।
অনলাইন গেমিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকিও বেড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিভাবক এবং শিক্ষকদের জন্য সতর্কতা জারি করে বলেছে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে গেমিংয়ের আসক্তি বাড়ছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও ব্রডকাস্টারদের নির্দেশ দিয়েছে, অনলাইন গেমিংয়ের আর্থিক ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে। এছাড়া, অবৈধ গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলো অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসের অর্থায়নের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজিটাল ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের (ডিআইএফ) একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে অবৈধ বেটিং বাজার বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমানত আকর্ষণ করে। এই রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, সরকারের উচিত আইনি গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য একটি ‘হোয়াইটলিস্ট’ তৈরি করা এবং কঠোর কেওয়াইসি নিয়ম প্রয়োগ করা।
ভারতে জুয়া এবং বেটিং রাজ্যের এখতিয়ারের অধীনে, এবং পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ অনুযায়ী বেশিরভাগ রাজ্যে জুয়া নিষিদ্ধ। তবে, গোয়া, দমন এবং সিকিমে ক্যাসিনো বৈধ। তামিলনাড়ু এবং তেলঙ্গানার মতো কিছু রাজ্য ইতিমধ্যে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, দক্ষতা-ভিত্তিক গেম (যেমন, রামি) বৈধ, কিন্তু সুযোগ-ভিত্তিক গেম নিষিদ্ধ।
তবে, দক্ষতা এবং সুযোগের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা প্রায়ই জটিল। নতুন বিল এই ধরনের ধূসর এলাকা দূর করতে এবং একটি স্পষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করতে চায়।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে অনলাইন গেমিং শিল্পে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। যেসব অ্যাপ রিয়েল-মানি গেমিংয়ের উপর নির্ভরশীল, যেমন জুপি, এমপিএল বা উইনজো, তাদের ব্যবসায়িক মডেল পরিবর্তন করতে হতে পারে। তবে, দক্ষতা-ভিত্তিক গেমগুলোর জন্য এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে।
সরকারের এই পদক্ষেপ ব্যবহারকারীদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা গেমিং শিল্পের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ২.৫ লক্ষ চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারত।
পাইকারি বাজারে সবজির দাম চড়ছে, খুচরো বাজারে ভোগান্তি দ্বিগুণ
সরকারের এই নতুন বিল অনলাইন গেমিং শিল্পে স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা আনার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ। নগদ লেনদেন নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে অবৈধ জুয়া এবং অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব হবে। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা এবং দক্ষতা-ভিত্তিক গেমগুলোর জন্য সঠিক নীতি তৈরি করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই আইন কীভাবে কার্যকর হয় এবং এর ফলে গেমিং শিল্পে কী পরিবর্তন আসে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।