কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘ড্রেস অ্যালাউন্স’ বা ড্রেস ভাতা (Government Slashes Dress Allowance) বহু বছর ধরে চালু আছে। এই ভাতা মূলত তাদের অফিসিয়াল পোশাক বা ইউনিফর্মের খরচ মেটানোর জন্য প্রদান করা হয়। ৭ম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পূর্ববর্তী ওয়াশিং, ইউনিফর্ম ও কিট মেইনটেন্যান্স ভাতার জায়গায় এই ড্রেস ভাতা চালু হয় এবং প্রতিবছর জুলাই মাসে এককালীনভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে এবার এই ড্রেস ভাতার নিয়মে বড়সড় পরিবর্তন আনল কেন্দ্র সরকার।
নতুন নিয়ম: জুলাই ২০২৫-এর পর নিয়োগপ্রাপ্তরা আর পাবেন না পূর্ণ ড্রেস ভাতা
সম্প্রতি এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জুলাই ২০২৫-এর পর থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা আর পূর্ণাঙ্গ বার্ষিক ড্রেস ভাতা পাবেন না। তাদের ক্ষেত্রে ড্রেস ভাতা অনুপাতিক ভিত্তিতে প্রদান করা হবে, অর্থাৎ, যে মাস থেকে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, সেখান থেকে পরবর্তী বছরের জুন পর্যন্ত যতগুলো মাস, সেই হিসেব অনুযায়ী ভাতা মিলবে।
ড্রেস ভাতা কী?
ড্রেস ভাতা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বার্ষিক অর্থমূল্য, যা সরকার নির্দিষ্ট কিছু বিভাগের কর্মীদের অফিসের নির্ধারিত পোশাক বা ইউনিফর্ম কেনার খরচ বাবদ প্রদান করে। এই ভাতা সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, ডাক বিভাগ, রেলওয়ে সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীরা পেয়ে থাকেন। এর পরিমাণ কর্মীর পদের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় — যেমন প্রতিরক্ষা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা তুলনামূলকভাবে বেশি ভাতা পান।
নতুন নীতির বিস্তারিত:
২০২৫ সালের ২৪ মার্চে অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় বিভাগের জারি করা অফিস মেমোর্যান্ডামে বলা হয়েছে:
“যদি কোনো কেন্দ্রীয় সরকার কর্মী জুলাই মাসে ড্রেস ভাতা প্রদানের পর চাকরিতে যোগ দেন, তবে তাকে ড্রেস ভাতা অনুপাতে প্রদান করা হবে। অনুপাতে ভাতা প্রদানের ফর্মুলা হবে:
(বার্ষিক ভাতা ÷ ১২) × (চাকরিতে যোগদানের মাস থেকে পরবর্তী বছরের জুন পর্যন্ত মাসের সংখ্যা)”
এই নির্দেশ অনুযায়ী, কেউ যদি ডিসেম্বর ২০২৫-এ চাকরিতে যোগ দেন, তবে তিনি ৭ মাসের (ডিসেম্বর থেকে জুন) জন্য ড্রেস ভাতা পাবেন, অর্থাৎ (পুরো ভাতা ÷ ১২) × ৭।
যোগাযোগ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা
২০২৫ সালের ১৬ জুন তারিখে যোগাযোগ মন্ত্রকের জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রকের ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী ড্রেস ভাতা প্রদান সংক্রান্ত পুরনো নীতিমালা — অর্থাৎ ৫ মার্চ, ২০২০ সালের অফিস মেমোর্যান্ডাম — বাতিল করা হলো নতুন নিয়ম কার্যকর করার মাধ্যমে। এখন থেকে জুলাই ২০২৫-এর পর যারা চাকরিতে যোগ দেবেন, তারা নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী ভাতা পাবেন।
অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে কী হবে?
এই পরিবর্তন কেবল নতুন কর্মীদের ক্ষেত্রেই কার্যকর হচ্ছে। জুলাই ২০২৫-এর পর অবসর নিতে যাওয়া কর্মীদের ড্রেস ভাতা কীভাবে দেওয়া হবে — সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রক জানিয়েছে, এই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকের থেকে পরবর্তী নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
তবে ততদিন পর্যন্ত ৫ মার্চ, ২০২০ সালের পুরনো নির্দেশনাই কার্যকর থাকবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী:
যারা ডিসেম্বরের পর অবসর নেবেন, তারা পুরো ড্রেস ভাতা পাবেন।
ডিসেম্বরের মধ্যে অবসর গ্রহণকারী কর্মীরা হাফ ড্রেস ভাতা পাবেন।
কী প্রভাব পড়তে পারে?
এই পরিবর্তনের ফলে নতুন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রথম বছরে আয় কিছুটা কমে যাবে। আগে তারা প্রথম বছরের জন্যও পুরো ড্রেস ভাতা পেতেন, যদিও কয়েক মাসের জন্যই কাজ করতেন। এখন সেই সুবিধা থাকবে না। তবে এতে সরকারের বার্ষিক ব্যয় কিছুটা কমবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ড্রেস ভাতা নিয়ে এই নতুন নীতির ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের জন্য একটি বাস্তবিক পরিবর্তন আসছে। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে ছোট অঙ্কের আর্থিক বিষয়, তবু বেতন কাঠামোর অংশ হিসেবে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। অবসানকালীন ভাতার বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে স্পষ্ট নির্দেশনা এলে, তখন পুরো প্রভাব বোঝা যাবে।
সরকারি কর্মীদের পেশাদার রূপ ধরে রাখার জন্য ড্রেস ভাতা গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই পরিবর্তন কর্মীদের মধ্যে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। যদিও এটি শুধুমাত্র নতুন কর্মীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য — তবুও বর্তমান ও আগত কর্মীদের জন্য পরিষ্কার তথ্য প্রদান সরকারের দায়িত্ব।