আগে আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ডের (Ration Card) সংযুক্তিকরণ হয়েছে। এবার কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন পদক্ষেপ নিতে চাইছে, যেখানে রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও সংযুক্ত করা হবে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হল রেশন বণ্টন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করা, এবং সুবিধাভোগীদের কাছে সরকারের সাহায্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী করা।
কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক সম্প্রতি রেশন বণ্টন সংক্রান্ত ২০২৫ সালের নির্দেশিকায় কিছু সংশোধন আনতে প্রস্তাব দিয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব রাজ্যের খাদ্যসচিবদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন, যেখানে এই প্রস্তাবের কথা তুলে ধরা হয়। এই সংশোধনের প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন রেশন কার্ড তৈরির সময়, যখন পরিবারের প্রধান ই-কেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক নো ইওর কাস্টমার) ফর্ম পূরণ করবেন, তখন শুধু আধার কার্ডের তথ্যই নয়, বরং সেই পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও নেওয়া হবে। এর ফলে রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণ সম্ভব হবে।
কেন এই পদক্ষেপ?
এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কী? কেন কেন্দ্রীয় সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণ করতে চাইছে? অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এর ফলে কি সরকার ভবিষ্যতে চাল ও গম বিতরণের বদলে নগদ ভর্তুকি দেওয়ার পথে হাঁটতে চাইছে? আসলে, সরকারের লক্ষ্য হল, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধা সরাসরি মানুষের হাতে পৌঁছানো। এতে সরকার যেমন দুর্নীতি রোধ করতে সক্ষম হবে, তেমনি রেশন কার্ডের সুবিধাভোগী পরিবারগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা ট্রান্সফার করা যাবে।
এছাড়া, বর্তমানে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন (NFSA) অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রায় ৮১.৩৫ কোটি মানুষকে মাথা পিছু পাঁচ কেজি চাল বা গম দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় রেশন বিতরণে অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে প্রকৃত উপকারভোগীরা সঠিক পরিমাণে রেশন পান না। এই নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে, সেই সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণ করলে, রেশন বিতরণের পরিমাণ এবং তার গুণগত মান আরও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
নতুন রেশন কার্ড ব্যবস্থা: সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ
এভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে রেশন কার্ড সংযুক্ত করা হলে কিছু বড় সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রথমত, যাদের আধার কার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তারা সরাসরি নগদ ভর্তুকি বা সাহায্য পাবেন। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি কমবে, কারণ সমস্ত লেনদেন ডিজিটাল হবে এবং কোনোরকম লেনদেনের ত্রুটি বা অপব্যবহার আটকানো সম্ভব হবে।
তবে, এই প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষত গ্রামীণ বা দুর্ভিক্ষপূর্ণ এলাকার মানুষদের জন্য যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া কার্যকরী হবে না। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সঠিকভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে যাতে সাধারণ মানুষ এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারেন।