নয়াদিল্লি, ৩ ডিসেম্বর: সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ খবর ভেসে উঠল আজ বুধবার। লোকসভায় ভয়েস ভোটের মাধ্যমে পাস হয়েছে সেন্ট্রাল এক্সাইজ (Central Excise Amendment Bill ) বিল, ২০২৫ যা তামাক এবং তামাক-সম্পর্কিত পণ্যগুলোর উপর উচ্চতর এক্সাইজ ডিউটি আরোপের ব্যবস্থা করবে, যখন জিএসটি কম্পেনসেশন সেস ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের পর শেষ হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের নেতৃত্বে এই বিলটি আলোচনা ও পাসের জন্য উত্থাপিত হয়েছিল, এবং বিরোধীদলের স্লোগানিংয়ের মধ্যেও এটি অনুমোদিত হলো। এই পদক্ষেপ শুধু রাজস্বের ঘাটতি পূরণের জন্য নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে তামাকের মতো ‘সিন গুডস’-এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার একটা শক্তিশালী অস্ত্র। সাধারণ মানুষের কাছে এটা মানে সিগারেট, বিড়ি, গুটখা, পান মশলার দাম বাড়বে, কিন্তু দেশের কোষাগার এবং স্বাস্থ্য ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
পৃথিবী থেকে অনেক দূরে মহাকাশে অ্যাসিডের সন্ধান!
২০১৭ সালের ১ জুলাই জিএসটি চালু হওয়ার সময় কেন্দ্র তামাক এবং এর উপজাত পণ্যগুলোর উপর সেন্ট্রাল এক্সাইজ ডিউটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছিল, যাতে কম্পেনসেশন সেস আরোপ করা যায় এবং করের মোট ভার কম না হয়। এই সেসের মাধ্যমে রাজ্যগুলোকে জিএসটি-জনিত রাজস্বক্ষতির পূরণ দেওয়া হতো—প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
কোভিড মহামারীর কারণে এটি চার বছর বাড়ানো হয় ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এই সময়ে কেন্দ্র রাজ্যগুলোর ক্ষতি পূরণে ২.৬৯ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল, যা এখন সেসের আয় থেকে শোধ হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী সীতারামণ আজ লোকসভায় বলেছেন, “আর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই ঋণ পুরোপুরি শোধ হয়ে যাবে।
তারপর সেস বন্ধ হলে তামাকের উপর মোট করের ভার কমে যাবে, কারণ জিএসটির সর্বোচ্চ হার ৪০%। তাই এক্সাইজ ডিউটি ফিরিয়ে আনতে হবে যাতে করের মাত্রা অটুট থাকে।” এই বিলটি সেই ঘাটতি পূরণ করবে, এবং তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহারও কমাবে।
বিলের বিস্তারিত দেখলে চোখ কপালে ওঠে। এটি সেন্ট্রাল এক্সাইজ অ্যাক্ট, ১৯৪৪-এর ফোর্থ স্কেডিউলের সেকশন IV-এ সংশোধন করবে, যেখানে তামাক এবং নিকোটিন পণ্যগুলোর তালিকা রয়েছে। সিগার, চুরুট, সিগারেটের উপর প্রতি ১০০০ স্টিকে ৫,০০০ থেকে ১১,০০০ টাকা পর্যন্ত এক্সাইজ ডিউটি আরোপ হবে। চিবানো তামাক, জর্দা, সুগন্ধযুক্ত তামাকের হারও বাড়বে যেমন তামাকের বর্জ্যের হার ৫০% থেকে ৬০%-এ উন্নীত। হুকাহ তামাক, চুইং টোব্যাকো সহ সব ধরনের পণ্য এর আওতায় পড়বে।
সেস শেষ হওয়ার পর এই পণ্যগুলো ২৮% জিএসটি + কম্পেনসেশন সেস-এর পরিবর্তে ৪০% জিএসটি + নতুন এক্সাইজ ডিউটি-এর শিকার হবে। এছাড়া, পান মশলার উপরও একটা নতুন ‘হেলথ সিকিউরিটি অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি সেস’ আরোপের বিলও উত্থাপিত হয়েছে, যা জিএসটি সেস-এর জায়গা নেবে।
সীতারামণ বলেছেন, “এই করের আয় জনস্বাস্থ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তায় ব্যয় হবে।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে, উচ্চ কর তামাকের ব্যবহার কমায়, এবং ভারতের মতো দেশে যেখানে তামাক-জনিত রোগে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়, এটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
