১০০ দিনের কাজের মামলায় হাইকোর্টের রায় মানতে নারাজ কেন্দ্র, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হল কেন্দ্রীয় সরকার। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোড়ন তৈরি হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল,…

Center refuses to accept High Court verdict in 100-day work case, approaches Supreme Court

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হল কেন্দ্রীয় সরকার। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোড়ন তৈরি হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, আগামী ১ অগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ১০০ দিনের কাজ পুনরায় চালু করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল জানিয়ে দিল কেন্দ্র। জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দেশের শীর্ষ আদালতে মামলার শুনানি হতে পারে।

হাইকোর্টের নির্দেশ

   

গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য বন্ধ থাকায় পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। রাজ্যের দাবি, কেন্দ্র অন্যায্যভাবে টাকা আটকে দিয়েছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্টের(Supreme Court) নির্দেশ ছিল, ১ অগস্ট থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে আবার প্রকল্প চালু করতে হবে এবং শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি দিতে হবে। আদালতের যুক্তি ছিল, সাধারণ মানুষের জীবিকার সঙ্গে এই প্রকল্প প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তাই কেন্দ্র দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।

কেন্দ্রের অবস্থান

কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অর্থ নয়ছয় হয়েছে। বিভিন্ন তদন্তে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়েছে। তাই কেন্দ্রের দাবি, প্রকল্প চালুর আগে পুরোপুরি নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ হওয়া জরুরি। কেন্দ্রের আইনজীবীদের মতে, হাইকোর্টের নির্দেশ প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতে বাধা সৃষ্টি করবে। সেই কারণেই সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে।

রাজ্যের প্রতিক্রিয়া

Advertisements

এদিকে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কেন্দ্র বাংলার গরিব শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন, বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্র প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলছে, তার অধিকাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

শ্রমিকদের অবস্থা

বর্তমানে গ্রামীণ বাংলার বহু পরিবার ১০০ দিনের কাজ না থাকায় চরম সংকটে পড়েছে। প্রতিদিনের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে পাড়ি দিচ্ছেন। আবার অনেকের সংসার টানাপোড়েনের মুখে পড়েছে। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের আশার আলো জেগেছিল। কিন্তু কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে মামলা করায় অনিশ্চয়তার ঘনঘটা ফের বেড়ে গেল।

রাজনীতি বনাম বাস্তবতা

রাজনীতির পাল্টাপাল্টি অবস্থান একদিকে চললেও সাধারণ মানুষ চান দ্রুত সমাধান। কারণ, রাজনীতি বা আদালতের টানাপোড়েন তাদের পেটে ভাত জোগাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০০ দিনের কাজ শুধু একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং এটি বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই প্রকল্প বন্ধ থাকলে গ্রামাঞ্চলে চাহিদা কমে যায়, যার প্রভাব পড়ে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও।