ভারতের শিল্প বিপ্লবের অগ্রদূত জামশেদজি টাটার ১৮৬ তম জন্মবার্ষিকীর পুর্তি

প্রতিবছর ৩ মার্চ টাটা গ্রুপের পক্ষ থেকে জামসেদজি নুসেরওয়াজি টাটাকে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এবছর…

Jamsetji-Tata

প্রতিবছর ৩ মার্চ টাটা গ্রুপের পক্ষ থেকে জামসেদজি নুসেরওয়াজি টাটাকে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এবছর জামশেদজি টাটার ১৮৬ তম জন্মবার্ষিকীর পুর্তি হয়েছে। তিনি ছিলেন একজন প্রখর শিল্পপতি। যার উদ্দ্যেগে ভারত শিল্প ও সামাজিক পরিমণ্ডলকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছিল। ১৮৩৯ সালে গুজরাটের নবসারি শহরে জন্ম নেওয়া জামশেদজি টাটা ভারতের শিল্পে নতুন সূচনা করেছিলেন। যা ভারতকে শিল্পায়িত দেশের তালিকায় যুক্ত করতে সহায়ক হয়েছে।

শিল্পে বিপ্লবী পরিবর্তন

   

জামশেদজি টাটার জীবন ছিল এক বিস্ময়কর দর্শন এবং সাহসিকতার গল্প। ১৮৭০-এর দশকে মধ্য ভারতের একটি সুতা মিল দিয়ে তাঁর শিল্প ভ্রমণ শুরু হলেও, তিনি যা কিছু শুরু করেছিলেন তা ছিল ভবিষ্যতের জন্য এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি শুধু প্রতিষ্ঠান তৈরি করেননি, বরং সমাজ ও অর্থনীতি উভয়ের জন্য এক নতুন পথ প্রদর্শন করেছিলেন। তার কার্যক্রম শুধুমাত্র লাভের দিকে মনোনিবেশ করেনি, বরং সমাজকল্যাণ এবং পরিবেশগত দায়িত্বকেও এক বড় লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, এবং সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে তার উদার দান বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলেছিলেন। বিশেষত তাঁর প্রতিষ্ঠিত টাটা ট্রাস্টস আজও ভারতের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষকে সাহায্য করছে।

টাটা স্টিলের প্রতিষ্ঠা এবং জামশেদপুরের উন্নতি

তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানির প্রতিষ্ঠা, যা আজকের টাটা স্টিল। ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, এই প্রতিষ্ঠান ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে জামশেদপুর শহরটি আজ একটি উদাহরণ, যেখানে তার লক্ষ্য জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
এখনও টাটা স্টিলের বর্তমান প্রজন্ম তার প্রতিষ্ঠাতার লক্ষ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের স্টিল উৎপাদন করছে, এবং ইউরোপে কম নির্গমনযুক্ত স্টিল উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

কর্মচারীদের কল্যাণে অবদান

জামশেদজি টাটার দৃষ্টিভঙ্গি কর্মীদের স্বাস্থ্যের জন্যও ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী। ১৮৬০-এর দশকে, তিনি সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া স্পিনিং, উইভিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং কর্মীদের জন্য উপযুক্ত কাজের সময়, প্রভিডেন্ট ফান্ড স্কিম, চিকিৎসা বীমা এবং ডিসপেনসারি চালু করেন যা আজকের কর্মসংস্থান পরিবেশের তুলনায় অনেকটাই অগ্রগামী ছিল।

Advertisements

দাতব্য কাজ এবং মানবকল্যাণে অবদান

টাটার অন্যতম বড় কীর্তি ছিল তার দানশীল কাজ। তাঁর দানের পরিমাণ প্রায় ১০২ বিলিয়ন ডলার, যা মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়িত হয়েছে। এই দানগুলি আজও ভারত এবং বিদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে এবং তার দানশীলতা তাকে শতাব্দীর অন্যতম সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

নিস্বার্থ দৃষ্টিভঙ্গি: সমাজের উন্নতি

জামশেদজি টাটার জীবন আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত সাফল্য শুধুমাত্র সামগ্রীক অর্জন দ্বারা পরিমাপ করা হয় না, বরং সামাজিক পরিবর্তন এবং মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা সবচেয়ে বড় সাফল্য। টাটা গ্রুপ আজও তার প্রতিষ্ঠাতার অঙ্গীকারে অটুট থেকে সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে লাভের চেয়ে বড় লক্ষ্য হল মানুষের কল্যাণ।

জামশেদজি টাটার অবদান অনন্য, এবং তাঁর দর্শন ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News