ভারত ও পাকিস্তান (pakistan) শনিবার একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যা মার্কিন মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে। এই ঘোষণার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের মিথ্যা দাবি এবং প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের দাবি—যেমন ভারতের এস-৪০০ এবং ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, বিমানঘাঁটি এবং গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংসের কথা—সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
কর্নেল কুরেশি কি বলেছেন
তিনি বলেন, “পাকিস্তান (pakistan) দাবি করেছে যে তারা তাদের জেএফ-১৭ দিয়ে আমাদের এস-৪০০ এবং ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ধ্বংস করেছে, যা সম্পূর্ণ ভুল। দ্বিতীয়ত, তারা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে যে সিরসা, জম্মু, পাঠানকোট, বাথিন্ডা, নালিয়া এবং ভুজের আমাদের বিমানঘাঁটিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা। তৃতীয়ত, পাকিস্তানের মিথ্যা প্রচারণা অনুযায়ী, চণ্ডীগড় এবং ব্যাসের আমাদের গোলাবারুদ ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা একেবারেই ভুল।”
কুরেশি পাকিস্তানের অভিযোগ, যে ভারতীয় সেনাবাহিনী মসজিদের মতো ধর্মীয় স্থানে আঘাত করেছে, তাও খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতি, এবং আমাদের সেনাবাহিনী ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধের একটি সুন্দর প্রতিফলন। আমরা সকল ধর্মের উপাসনালয়কে সর্বোচ্চ সম্মান করি।”
উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন
উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এই বিষয়ে আরও স্পষ্ট করে বলেন, “আমাদের সমস্ত সামরিক অভিযান কেবলমাত্র সন্ত্রাসী শিবির এবং ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত অবকাঠামোর উপর লক্ষ্যবস্তু ছিল। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কোনো ধর্মীয় স্থানকে লক্ষ্য করেনি।” ব্যোমিকা সিং আরও জানান, ভারতীয় হামলায় পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি—স্কারদু, জ্যাকবাবাদ এবং ভোলারি—ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া, পাকিস্তানের (pakistan) বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং রাডার সিস্টেমের ক্ষতি তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের এই ক্ষতি তাদের সামরিক সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।” এই সংঘাতের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান শনিবার বিকেল ৫টা (ভারতীয় সময়) থেকে স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রে সমস্ত সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান
পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, পাকিস্তানের (pakistan) সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) শনিবার বিকেল ৩:৩৫-এ ভারতীয় ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, “তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে যে উভয় পক্ষ শনিবার ১৭:০০ ঘণ্টা থেকে স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রে সমস্ত গোলাবর্ষণ এবং সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করবে। উভয় পক্ষে এই সমঝোতা কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” মিশ্রি আরও জানান, উভয় দেশের ডিজিএমও আগামী ১২ মে দুপুর ১২টায় আবার কথা বলবেন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেন ওমর আবদুল্লাহ
কমান্ডার রঘু আর নায়ার নিশ্চিত করেছেন
কমান্ডার রঘু আর নায়ার নিশ্চিত করেছেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীকে এই যুদ্ধবিরাম চুক্তি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “সমুদ্র, আকাশ এবং স্থলে সমস্ত সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য একটি সমঝোতা হয়েছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই সমঝোতা মেনে চলার জন্য নির্দেশ পেয়েছে।” এই পদক্ষেপ অঞ্চলের উত্তেজনা হ্রাস এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম এই যুদ্ধবিরামের ঘোষণা দেন। তিনি তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর, আমি ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে ভারত ও পাকিস্তান (pakistan) একটি পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরামে সম্মত হয়েছে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টায় ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং শরিফের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণের জন্য তাঁদের প্রশংসা করি।”
পাকিস্তানের (pakistan) উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারও এই যুদ্ধবিরাম নিশ্চিত করে বলেন, “পাকিস্তান (pakistan) ও ভারত অবিলম্বে যুদ্ধবিরামে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান সবসময় অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে, তবে এর সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে কোনো আপস করেনি।” ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান আজ গোলাবর্ষণ এবং সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করার বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।
অপারেশন সিঁদুর
ভারত সন্ত্রাসবাদের সকল রূপের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও আপসহীন অবস্থান বজায় রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে।” এই যুদ্ধবিরামের পটভূমিতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ উল্লেখযোগ্য। গত ২ মে পহেলগাঁওয়ে একটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ৭ মে ভারত এই অভিযান শুরু করে।
ভারত পাকিস্তানের (pakistan) গভীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানে। এর জবাবে পাকিস্তান আর্টিলারি গান এবং ড্রোন ব্যবহার করে উসকানিমূলক পদক্ষেপ নেয়। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে ভারত “উসকানিমূলক” এবং “উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী” হিসেবে বর্ণনা করে।
এই যুদ্ধবিরাম অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে ভবিষ্যতে যেকোনো জঙ্গি হামলাকে যুদ্ধের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই ঘটনা ভারতের সামরিক শক্তি এবং কূটনৈতিক দৃঢ়তার প্রমাণ। আগামী দিনে উভয় দেশের ডিজিএমও-র আলোচনা এই যুদ্ধবিরামের স্থায়িত্ব এবং অঞ্চলের শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।