নয়াদিল্লি: “সেনার প্রস্তুতি থাকা উচিত ২৪x৭, ৩৬৫ দিন”, দিল্লির প্রতিরক্ষা সেমিনার মঞ্চ থেকে এমনই দৃঢ় বার্তা দিলেন ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান। তিনি স্পষ্ট জানালেন, সীমান্তে এখনও ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলছে এবং এই যুদ্ধ শুধুই অস্ত্রে নয়, জ্ঞানে সজ্জিত সৈনিকই আগামী দিনের লড়াইয়ে সাফল্যের চাবিকাঠি (cds anil chauhan operation sindhur)।
তৃতীয় প্রজন্মের যুদ্ধ বিপ্লবে ভারত
সিডিএস বলেন, “আমরা দাঁড়িয়ে আছি সামরিক কৌশলের তৃতীয় বিপ্লবের দোরগোড়ায়৷” তাঁর কথায়, নতুন যুগের যুদ্ধ ‘convergence warfare’, যেখানে কাইনেটিক (অস্ত্রভিত্তিক) ও নন-কাইনেটিক (সাইবার, তথ্যযুদ্ধ) উপায় একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তিন স্তরের যুদ্ধবিদ্যা-ট্যাকটিক্যাল, অপারেশনাল ও স্ট্র্যাটেজিক-প্রতিটি স্তরে দক্ষ হওয়াই আজকের সেনার অপরিহার্য চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, “শুধু শস্ত্র নয়, ‘শাস্ত্র’-জ্ঞান-সমান গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক যোদ্ধার কাছে এই দুইয়ের মিশেলই অনিবার্য।”
অপারেশন সিঁদুর: জবাব ছিল নির্ভুল, কৌশলগত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু। কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষায়, “পাকিস্তান-প্রযোজিত” এই বর্বরতার জবাবে ৭ মে শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। লক্ষ্য ছিল, সীমান্তের ওপারে থাকা সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিকে চিরতরে ধ্বংস করা।
ভারতের টার্গেটেড স্ট্রাইক-এ ধ্বংস হয় ৯টি জঙ্গি পরিকাঠামো, যারা ছিল জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা ও হিজবুল মুজাহিদিন-এর মতো সংগঠনের অধীন। নিকেশ হয় ১০০-রও বেশি জঙ্গি।
পাকিস্তানের পাল্টা হামলা চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ আক্রমণ প্রতিহত করে। সীমান্তে উত্তেজনার মাঝে পাকিস্তান ভারতীয় বেসামরিক এলাকা ও সেনা ঘাঁটিকে নিশানা করার চেষ্টা করলে, ভারত পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ও সামরিক অবকাঠামোয় আঘাত হানে।
সামরিক স্তরেই থেমে যায় সংঘর্ষ, সেনার কূটনৈতিক সাফল্য
৪ দিনের তীব্র সংঘাতের পরে, ১০ মে পাকিস্তানের ডিজিএমও ভারতের ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেন। ভারত সম্মত হয়। সংঘর্ষ থামে, তবে বার্তা স্পষ্ট, সন্ত্রাসের জবাব বরাবরই হবে ‘মেপে’, কিন্তু কড়া হাতে।
রাজ্যসভায় প্রতিমন্ত্রী কির্তি বর্ধন সিং বলেন, “ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল ‘ফোকাসড, মেজারড এবং নন-এসক্যালেটরি’। আন্তর্জাতিক চাপ নয়, অপারেশনের পেছনে ছিল দেশের প্রতিরক্ষা কৌশল।”
সিদ্ধান্ত স্পষ্ট: সীমান্তে হানা মানেই চুপচাপ বসে থাকা নয়। অস্ত্রের পাশাপাশি জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আর কৌশলের মিশেলেই নতুন ভারতের জবাব তৈরি, সঠিক সময়ে, সঠিক টার্গেটে, সঠিক মাত্রায়।