কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (CBSE) ১১ ও ১২ শ্রেণির লিগ্যাল স্টাডিজ সিলেবাসে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা করেছে। নতুন সিলেবাসে তিন তালাক, রাজদ্রোহ এবং সেকশন ৩৭৭-এর মতো বিষয়গুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে, শিক্ষার্থীদের ভারতের নতুন ফৌজদারি আইন, যেমন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (BSA) পড়ানো হবে।
এই পরিবর্তনগুলি জাতীয় শিক্ষা নীতি (NEP) ২০২০-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা আধুনিক আইন ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারে। সিবিএসই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে সিনিয়র সেকেন্ডারি শিক্ষার্থীদের মৌলিক আইনি জ্ঞান দেওয়ার জন্য লিগ্যাল স্টাডিজ পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছিল।
তবে, এরপর আইনি সংস্কারের গতি ধীর হয়ে পড়ায় পাঠ্যক্রমটি পিছিয়ে পড়েছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বোর্ড এখন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করবে এবং প্রয়োজনে একটি বিষয়বস্তু উন্নয়ন সংস্থা নিয়োগ করবে, যাতে ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য আপডেটেড পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত হয়।
নতুন সিলেবাস ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে এবং এতে ভারতের আইনি কাঠামোতে সাম্প্রতিক সংস্কারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০২৩-২৪ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ফৌজদারি কার্যবিধি সংহিতা (সিআরপিসি) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তে যথাক্রমে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (বিএসএ) প্রবর্তিত হয়েছে।
এই নতুন আইনগুলির মূল বিষয়গুলি ছাড়াও, শিক্ষার্থীরা তিন তালাক নিষিদ্ধকরণ, সমকামিতার অপরাধমুক্তকরণের জন্য সেকশন ৩৭৭ বাতিল এবং রাজদ্রোহ আইন বিলুপ্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ আইনি সংস্কার সম্পর্কে পড়বে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য বিচারিক রায় এবং নতুন আইনি মতবাদও পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে। সিবিএসই-এর লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং সমসাময়িক আইনি বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া গড়ে তোলা।
সিবিএসই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিগ্যাল স্টাডিজ পাঠ্যক্রমটি প্রায় পাঁচ বছর আগে শিক্ষার্থীদের মৌলিক আইনি সাক্ষরতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছিল। তবে, ভারতের আইনি কাঠামোতে দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যপুস্তকগুলি আপডেট করা হয়নি।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে সেকশন ৩৭৭-এর আংশিক বিলুপ্তি, ২০১৯ সালে তিন তালাক নিষিদ্ধকরণ এবং রাজদ্রোহ আইন বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলি পূর্ববর্তী পাঠ্যক্রমে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
এই নতুন সংস্কারগুলি ভারতের ঔপনিবেশিক যুগের আইনগুলিকে প্রতিস্থাপন করে আধুনিক ও সমসাময়িক আইনি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, যা শিক্ষার্থীদের জানা অপরিহার্য। এই পরিবর্তনগুলি জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে, যা শিক্ষাকে আরও গতিশীল এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্ত করার উপর জোর দেয়।
সিবিএসই জানিয়েছে, নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। প্রয়োজনে একটি বিষয়বস্তু উন্নয়ন সংস্থাও নিয়োগ করা হতে পারে। এই পাঠ্যপুস্তকগুলি ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের আগে প্রস্তুত করা হবে। পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক এবং আকর্ষণীয় শিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের আইনি বিষয়ে গভীর আগ্রহ জাগিয়ে তুলবে।
লিগ্যাল স্টাডিজ ২০১৩ সালে ১১শ শ্রেণি এবং ২০১৪ সালে ১২শ শ্রেণিতে চালু হয়েছিল। ২০২৪ সালে শিক্ষা পরিদপ্তর আরও ২৯টি স্কুলে এই বিষয় চালু করার অনুমোদন দেয়, যা আইন, পাবলিক পলিসি এবং গভর্ন্যান্সে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়ের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।
বাণিজ্য উত্তেজনা কমতেই তেলের দামে বৃদ্ধি
লিগ্যাল স্টাডিজের পাঠ্যক্রমে সর্বশেষ বড় আপডেট হয়েছিল ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে, যখন পিওএসএইচ অ্যাক্ট ২০১৩, তথ্য অধিকার আইন, ভোক্তা সুরক্ষা আইন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকারের মতো বিষয়গুলি যুক্ত হয়েছিল।
বর্তমানে, ১১শ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে সাংবিধানিক মূল্যবোধ, আইনশাস্ত্র এবং আদালত ব্যবস্থার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত, যেখানে ১২শ শ্রেণিতে ব্যবসায়িক আইন, চুক্তি, অপকৃতি, ফৌজদারি আইন এবং টেকসই উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়। নতুন সিলেবাস এই বিষয়গুলিকে আরও সমসাময়িক এবং বিশ্লেষণাত্মক করে তুলবে।
সিবিএসই-এর এই সিলেবাস পরিবর্তন ভারতের আইনি শিক্ষাকে আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিন তালাক, রাজদ্রোহ এবং সেকশন ৩৭৭-এর মতো পুরনো আইন বাদ দিয়ে নতুন ফৌজদারি আইন এবং উল্লেখযোগ্য বিচারিক রায় যুক্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভারতের পরিবর্তিত আইনি কাঠামো সম্পর্কে গভীর ধারণা দেওয়া হবে। এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের আইনি পেশায় প্রবেশের জন্য আরও প্রস্তুত করবে এবং জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০-এর লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে।