গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (cbse)। কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (cbse) তার অধিভুক্ত স্কুলগুলিকে শিশুদের চিনির গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্যাম্পাসে “শুগার বোর্ড” স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে।
সিবিএসই-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন (cbse)
সিবিএসই (cbse)-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক দশকে শিশুদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা একসময় প্রধানত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যেত। এই উদ্বেগজনক প্রবণতার জন্য মূলত বেশি চিনি খাওয়া কে দায়ী করা হচ্ছে, যা প্রায়শই স্কুলের পরিবেশে সহজলভ্য চিনিযুক্ত স্ন্যাকস, পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে ঘটছে।
স্কুল প্রধানদের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে
সিবিএসই (cbse)স্কুল প্রধানদের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে বলেছে, “এই উদ্বেগজনক প্রবণতা মূলত বেশি চিনি খাওয়ার কারণে, যা প্রায়শই স্কুলের পরিবেশে চিনিযুক্ত স্ন্যাকস, পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের সহজলভ্যতার জন্য ঘটে। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ শুধুমাত্র ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় না, বরং স্থূলতা, দাঁতের সমস্যা এবং অন্যান্য বিপাকীয় রোগের কারণ হয়, যা শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য এবং একাডেমিক পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলে।”
সিবিএসই(cbse)-এর এই উদ্যোগ শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্রমবর্ধমান হার মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের ১৩ শতাংশ এবং ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ১৫ শতাংশ চিনি থেকে আসে, যা প্রস্তাবিত ৫ শতাংশের সীমার চেয়ে অনেক বেশি। স্কুলের আশপাশে চিনিযুক্ত পানীয়, স্ন্যাকস এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের সহজলভ্যতা এই অতিরিক্ত গ্রহণের জন্য অন্যতম কারণ।
“শুগার বোর্ড” স্থাপনের নির্দেশনা
“শুগার বোর্ড” স্থাপনের নির্দেশনা অনুসারে, স্কুলগুলিকে(cbse) এই বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শন করতে হবে, যার মধ্যে থাকবে দৈনিক প্রস্তাবিত চিনির পরিমাণ, সাধারণভাবে খাওয়া খাবারে (যেমন জাঙ্ক ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস) চিনির পরিমাণ, উচ্চ চিনি গ্রহণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিকল্প। সিবিএসই জানিয়েছে, “এই বোর্ডগুলি শিক্ষার্থীদের সচেতন খাদ্য পছন্দ সম্পর্কে শিক্ষিত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সুবিধা প্রচার করবে।”
সচেতনতামূলক সেমিনার এবং কর্মশালা
এছাড়াও, সিবিএসই (cbse)স্কুলগুলিকে সচেতনতামূলক সেমিনার এবং কর্মশালার আয়োজন করতে উৎসাহিত করেছে, যাতে শিক্ষার্থীরা চিনি কমানোর গুরুত্ব এবং এর স্বাস্থ্য সুবিধা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে। জেরোধা-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও নীথিন কামথ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে লিঙ্কডইনে লিখেছেন, “সিবিএসই-এর স্কুলগুলিতে শুগার বোর্ড স্থাপনের নির্দেশ একটি সঠিক দিকে পদক্ষেপ।” তিনি এর আগে ভারতীয় খাবারে উচ্চ চিনির উপাদান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সচেতনতার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন (এনসিপিসিআর)-এর সুপারিশের ভিত্তিতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এনসিপিসিআর, যা ২০০৫ সালের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন আইনের অধীনে গঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বিশেষত দুর্বল এবং প্রান্তিক শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য কাজ করে। সিবিএসই-এর চিঠিতে বলা হয়েছে, “অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য এবং একাডেমিক পারফরম্যান্সের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।”
‘টিভিতে মুখ দেখানোর ইচ্ছা’, চাকরিচ্যুতদের নিয়ে বিস্ফোরক ফিরহাদ
সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন
এই পদক্ষেপ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। এক্স-এ একাধিক পোস্টে ব্যবহারকারীরা এই উদ্যোগকে “স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “জাঙ্ক ফুড থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কস পর্যন্ত, শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, শিশুদের দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের ১০ শতাংশের কম চিনি থেকে আসা উচিত, এবং ৫ শতাংশের নিচে থাকলে আরও স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়। সিবিএসই-এর উদ্যোগ এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তবে, এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে স্কুলগুলির বাস্তবায়ন এবং অভিভাবকদের সহযোগিতার উপর। নীথিন কামথ উল্লেখ করেছেন, “এখন চ্যালেঞ্জ হল অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন করা এবং সোডা, কফি/চা এবং মাল্টেড পানীয়ের ব্যবহার কমানো।”
এই উদ্যোগ ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় (cbse) স্বাস্থ্য সচেতনতার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্কুলগুলি এখন শুধু একাডেমিক শিক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং শিশুদের সুস্থ জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে। আগামী মাসগুলিতে এই উদ্যোগ কীভাবে শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, তা দেখার বিষয়।


