৬০০০ কোটির কেলেঙ্কারি মামলায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে সিবিআই হানা

ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ভূপেশ বাঘেলের বাসভবনে বুধবার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (CBI Raids) তল্লাশি চালিয়েছে। জানা গেছে, সিবিআই-এর দল রায়পুর এবং ভিলাইয়ে…

CBI Raids Former Chhattisgarh CM Bhupesh Baghel’s Residence

ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ভূপেশ বাঘেলের বাসভবনে বুধবার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (CBI Raids) তল্লাশি চালিয়েছে। জানা গেছে, সিবিআই-এর দল রায়পুর এবং ভিলাইয়ে অবস্থিত বাঘেলের বাসভবনে পৌঁছেছে। এই অভিযানটি কথিত ৬০০০ কোটি টাকার মহাদেব অ্যাপ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। এর আগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই একই মামলায় বাঘেলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল।

   

Also Read | নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে তীব্র ভিড় ও ট্রেন বিলম্বে চরম বিশৃঙ্খলা

Advertisements

সূত্রের খবর অনুযায়ী, সিবিআই-এর দল শুধু ভূপেশ বাঘেলের রায়পুর ও ভিলাইয়ের বাসভবনেই নয়, একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ অফিসার এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে। বাড়ির ভিতরে তদন্ত চলছে এবং বাইরে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনা ছত্তিশগড়ের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

এর আগে ইডি-র অভিযান

এর আগে গত ১০ মার্চ ২০২৫-এ, ইডি ছত্তিশগড়ে কথিত মদ কেলেঙ্কারির তদন্তে ভূপেশ বাঘেলের ছেলে চৈতন্য বাঘেল সহ অন্যান্যদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল। সেই অভিযানে ইডি প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করেছিল বলে জানা গেছে। এবার সিবিআই-এর তল্লাশি মহাদেব অ্যাপ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত, যা একটি বেআইনি অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তাধীন। এই কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে।

ভূপেশ বাঘেলের প্রতিক্রিয়া

সিবিআই-এর এই অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ভূপেশ বাঘেল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “এখন সিবিআই এসেছে। আগামী ৮ ও ৯ এপ্রিল গুজরাটের আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিতব্য এআইসিসি-র বৈঠকের জন্য গঠিত ‘ড্রাফটিং কমিটি’-র সভায় যোগ দিতে আজ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সিবিআই রায়পুর ও ভিলাইয়ের বাসভবনে পৌঁছে গেছে।” এই পোস্টের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এই অভিযান তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে হতে পারে।

কংগ্রেসের অভিযোগ: বিজেপি বাউন্স হয়ে গেছে

ছত্তিশগড় কংগ্রেসের যোগাযোগ শাখার প্রধান সুশীল আনন্দ শুক্লা এই অভিযানের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “এর আগে বিজেপি ভূপেশ বাঘেলের বাড়িতে ইডি পাঠিয়েছিল। আজ সিবিআই তাঁর রায়পুর ও ভিলাইয়ের বাসভবনে এসেছে। আজ তাঁর দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচি ছিল। এই কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার জন্যই বিজেপি সিবিআই-কে পাঠিয়েছে। বিজেপি বাউন্স হয়ে গেছে কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না।” শুক্লার এই বক্তব্যে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

মহাদেব অ্যাপ কেলেঙ্কারি কী?

মহাদেব অ্যাপ কেলেঙ্কারি একটি বেআইনি অনলাইন বেটিং প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত, যা নতুন ব্যবহারকারীদের নথিভুক্ত করা, ইউজার আইডি তৈরি এবং ‘বেনামি’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের জটিল জালের মাধ্যমে অর্থ পাচারের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ। ইডি-র তদন্তে দাবি করা হয়েছে যে, এই কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার অর্থ লেনদেন হয়েছে। এই মামলায় ছত্তিশগড়ের বেশ কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং আমলার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সিবিআই এই তদন্ত ছত্তিশগড় পুলিশের ইকোনমিক অফেন্সেস উইং (ইওডব্লিউ)-এর কাছ থেকে গ্রহণ করেছে, যারা আগে বাঘেল সহ অ্যাপের প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই অভিযান ছত্তিশগড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করছে। অন্যদিকে, বিজেপি এই তদন্তকে কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। বাঘেলের বিরুদ্ধে ইডি আগেই অভিযোগ করেছিল যে, মহাদেব অ্যাপের প্রোমোটাররা তাঁকে ৫০৮ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছে। তবে, বাঘেল এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন।

তদন্তের ভবিষ্যৎ

সিবিআই এই মামলায় এখনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে, এই অভিযানের পর আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইডি ইতিমধ্যে এই মামলায় ২৪২৬ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। সিবিআই-এর তদন্তে নতুন কী তথ্য বেরিয়ে আসে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।

ভূপেশ বাঘেলের বাড়িতে সিবিআই-এর এই তল্লাশি ছত্তিশগড়ের রাজনীতিতে নতুন মোড় আনতে পারে। কংগ্রেস এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বললেও, তদন্তের ফলাফলই এর আসল চিত্র তুলে ধরবে। বাংলার মানুষও এই ঘটনার দিকে নজর রেখেছে, কারণ এটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি বড় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।