অনলাইন প্রতারণা চক্রে সিবিআইয়ের অভিযান, গ্রেফতার ৩

Irrigation Project Scam

দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া অনলাইন প্রতারণার বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিল সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI)। মঙ্গলবার এক সমন্বিত অভিযানে কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও কেরলে হানা দিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। অভিযোগ, এরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে অনলাইন ইনভেস্টমেন্ট ও পার্ট-টাইম চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেছে।

সিবিআই সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাইবার অপরাধ দমন শাখা I4C (Indian Cyber Crime Coordination Centre)–এর অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়। অভিযোগে বলা হয়, এক সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল অ্যাপ ও এনক্রিপ্টেড মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহার করে মানুষকে উচ্চ মুনাফার বিনিয়োগ স্কিমে টানত। অনেকেই সেই লোভে পড়ে টাকা জমা দেন, কিন্তু শেষে প্রতারণার শিকার হন।

তদন্তে জানা গিয়েছে, এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে বিদেশি নাগরিকও যুক্ত। বেঙ্গালুরু-সহ একাধিক শহরে শেল কোম্পানি তৈরি করে টাকার কারসাজি চলছিল। এইসব কোম্পানির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হত এবং সাধারণ মানুষকে পার্ট-টাইম চাকরির নাম করে সেইসব কোম্পানির ‘ডিরেক্টর’ করা হত, যাতে প্রতারণার দায় তাদের ঘাড়ে পড়ে।

Advertisements

সিবিআই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “প্রতারকরা ডিজিটাল বিজ্ঞাপন, বাল্ক এসএমএস প্রচার ও সিম-বক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত জনসংযোগ বাড়াত। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে (বিশেষত টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ) নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে কেওয়াইসি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করত। সেই তথ্য দিয়ে নকল প্রোফাইল তৈরি করা হত এবং জাল ডিজিটাল সিগনেচার ব্যবহার করে একাধিক ভুয়ো কোম্পানি রেজিস্টার করা হত।”

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে যে টাকা আসত, তা ইউপিআই, পেমেন্ট গেটওয়ে ও ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বারবার ঘোরানো হত যাতে আসল উৎস গোপন থাকে। টাকার বড় অংশ ক্রিপ্টোকারেন্সি, সোনা অথবা বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হত।

তদন্তকারীদের মতে, ভারতীয় কিছু নাগরিক বিদেশি মাফিয়া গোষ্ঠীর নির্দেশে এই কাজ করছিল। বিদেশে থাকা এই অপরাধীরা অনলাইন গ্যাম্বলিং ও ইনভেস্টমেন্ট প্রতারণার মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। বর্তমানে সিবিআই তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এই গোটা অভিযান “অপারেশন চক্র V (Operation Chakra V)”-এর অংশ, যা সাইবার প্রতারণা রুখতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সিবিআই জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বহু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ই-ওয়ালেট ফ্রিজ করা হয়েছে এবং আর্থিক পথ ধরে তদন্ত এগোচ্ছে।

সিবিআই-এর এক মুখপাত্র বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল প্ল্যাটফর্মে অপরিচিত বিনিয়োগ বা চাকরির প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়াই সঠিক। ডিজিটাল জালিয়াতি রুখতে জনসচেতনতা তৈরি করা এখন জরুরি।”

Advertisements