সরকারি সেচ প্রকল্পে চুরি! সিবিআইয়ের জালে রাঘব বোয়াল

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ১৮৩ কোটি টাকার জাল ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি কেলেঙ্কারির (Irrigation Project Scam) ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (CBI) বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত…

Irrigation Project Scam

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ১৮৩ কোটি টাকার জাল ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি কেলেঙ্কারির (Irrigation Project Scam) ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (CBI) বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ইন্দোরের তীর্থ গোপীকন লিমিটেড নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (MD) মহেশ কুম্ভানি এবং আরেকজন অভিযুক্ত গৌরব ধাকড়কে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisements

এই ঘটনা মধ্যপ্রদেশ জল নিগম লিমিটেড (এমপিজেএনএল)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে জাল ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির মাধ্যমে ৯৭৪ কোটি টাকার তিনটি সেচ প্রকল্পের ঠিকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সিবিআই-এর তদন্তে উঠে এসেছে যে, কোম্পানিটি ১৮৩.২১ কোটি টাকার আটটি জাল ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি জমা দিয়ে এই প্রকল্পগুলি পেয়েছিল, এবং এমপিজেএনএল ৮৫ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করেছিল। এই কেলেঙ্কারি মধ্যপ্রদেশের জল সম্পদ বিভাগে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে।

   

সিবিআই-এর তদন্ত অনুসারে, তীর্থ গোপীকন লিমিটেড ২০২৩ সালে মধ্যপ্রদেশের ছত্রপুর, সাগর এবং ডিন্ডোরি জেলায় ৯৭৪ কোটি টাকার তিনটি সেচ প্রকল্পের জন্য ঠিকা পায়। এই প্রকল্পগুলি পাওয়ার জন্য কোম্পানিটি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) নামে আটটি জাল ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি জমা দেয়, যার মোট মূল্য ছিল ১৮৩.২১ কোটি টাকা।

এই গ্যারান্টিগুলির সত্যতা যাচাইয়ের সময়, এমপিজেএনএল পিএনবি-এর জাল ই-মেইল ডোমেন থেকে প্রাপ্ত ই-মেইলের মাধ্যমে গ্যারান্টির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছিল বলে মনে করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই গ্যারান্টিগুলি সম্পূর্ণ জাল বলে প্রমাণিত হয়। এই জালিয়াতির ভিত্তিতে এমপিজেএনএল কোম্পানিটিকে প্রকল্পগুলির জন্য অনুমোদন দেয় এবং ৮৫ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করে।

এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই ৯ মে, ২০২৫-এ এই মামলায় তিনটি পৃথক এফআইআর দায়ের করে। তদন্তের অংশ হিসেবে সিবিআই ১৯ ও ২০ জুন, ২০২৫-এ দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, ঝাড়খণ্ড এবং মধ্যপ্রদেশের ২৩টি স্থানে তল্লাশি অভিযান চালায়।

এই অভিযানে কলকাতা থেকে পিএনবি-এর একজন সিনিয়র ম্যানেজার গোবিন্দচন্দ্র হানসদা এবং মোহাম্মদ ফিরোজ খান নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সিবিআই-এর সাম্প্রতিক অভিযানে মহেশ কুম্ভানি এবং গৌরব ধাকড়কে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা এই কেলেঙ্কারির মূল পরিকল্পনাকারী বলে মনে করা হচ্ছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে, কলকাতায় সক্রিয় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এই জালিয়াতির পিছনে কাজ করছিল।

তীর্থ গোপীকন লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় গুজরাটের আহমেদাবাদে অবস্থিত, তবে ইন্দোরে এর একটি শাখা কার্যালয় রয়েছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহেশ কুম্ভানি, পরিচালক চন্দ্রিকাবেন এবং নির্বাহী পরিচালক পল্লব কুম্ভানি এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই কোম্পানি জল প্রকল্প এবং স্মার্ট সিটি উন্নয়নের মতো বিভিন্ন নির্মাণ কাজে সক্রিয়। তবে, জাল ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির মাধ্যমে সরকারি ঠিকা হাতিয়ে নেওয়ার এই ঘটনা কোম্পানির কার্যকলাপের উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

এই কেলেঙ্কারি মধ্যপ্রদেশ জল নিগম লিমিটেডের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে, কারণ ৮৫ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়েছিল জাল গ্যারান্টির ভিত্তিতে। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট কোম্পানিকে এক মাসের মধ্যে বৈধ ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল এবং ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করার আদেশ দেয়। সিবিআই-এর তদন্তে এখনও এই সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্য এবং সম্ভাব্য সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই কেলেঙ্কারি কেবল আর্থিক জালিয়াতি নয়, বরং সরকারি সম্পদ এবং জনসাধারণের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত একটি গুরুতর অপরাধ। এটি সরকারি প্রকল্পে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। সিবিআই-এর তদন্ত এখনও চলছে, এবং আগামী দিনে আরও গ্রেফতারির সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা মধ্যপ্রদেশের জল সম্পদ বিভাগে সুশাসনের প্রশ্ন তুলেছে এবং সরকারি ঠিকা প্রক্রিয়ায় আরও কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে।

ইন্ডিয়া এনার্জি স্ট্যাক গড়তে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের নতুন উদ্যোগ

১৮৩ কোটি টাকার এই জাল ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি কেলেঙ্কারি মধ্যপ্রদেশের জল নিগম এবং সরকারি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় একটি বড় ত্রুটি প্রকাশ করেছে। সিবিআই-এর দ্রুত পদক্ষেপ এবং গ্রেফতারির মাধ্যমে এই কেলেঙ্কারির মূল পরিকল্পনাকারীদের ধরা সম্ভব হয়েছে। তবে, এই ঘটনা ভবিষ্যতে এমন জালিয়াতি রোধে আরও কঠোর নীতি ও তদারকির প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।