নয়াদিল্লি: দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার অদূরে সোমবার সন্ধ্যায় ঘটে গেল এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ। হায়দরাবাদ গেটের পাশে সাবহাশ মার্গে একটি হুন্ডাই i20 গাড়ি মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত নয় জনের, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার সময় ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। লালকেল্লা মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় তখন রুদ্ধশ্বাস যানজট, অফিসফেরত মানুষের ভিড়, তার মধ্যেই ধ্বনিত হয় বিকট শব্দ, আর মুহূর্তে আগুনে ঘিরে ফেলে চারপাশ।
আত্মঘাতী হামলার ছায়া তদন্তে
প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসছে উদ্বেগজনক তথ্য। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গাড়িটি বিস্ফোরণের আগে তিন ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় পার্ক করা ছিল। একমাত্র চালককেই টোলপ্লাজা থেকে সাবহাশ মার্গ পর্যন্ত গাড়িটি চালাতে দেখা গিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজে। তদন্তকারীদের অনুমান, নির্দিষ্ট সময় মেনে পরিকল্পিতভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, যেন ব্যস্ত সময়ে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে ঘটনাটিকে ফিদায়েঁ-ধাঁচের আত্মঘাতী হামলার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে তদন্ত দল।
শক্তিশালী বিস্ফোরণ, ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক যানবাহন Car explosion near Red Fort kills 9
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের অভিঘাতে আশপাশের একাধিক গাড়ি ও ভবনের জানলা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ধ্বংসাবশেষ খতিয়ে দেখা হচ্ছে কোন ধরনের এবং কত পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে তা নির্ধারণে।
UAPA-র আওতায় মামলা, তৎপর দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থা
ঘটনার পরই দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল কোটওয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছে Unlawful Activities (Prevention) Act বা UAPA-এর ধারা ১৬ ও ১৮-এ, যা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। পাশাপাশি Explosives Act এবং Bharatiya Nyaya Sanhita (BNS)-এর একাধিক ধারাও প্রয়োগ করা হয়েছে। রাজধানীর একাধিক এলাকায় জোর তল্লাশি চলছে।
তদন্তে নেমেছে NSG ও NIA
ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন দিল্লি পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। তৎপরতা শুরু করেছে জাতীয় নিরাপত্তা গার্ড (NSG) এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-র টিমও। সন্দেহভাজন চালক বা হামলাকারীর পরিচয় জানতে চলছে সিসিটিভি বিশ্লেষণ। টোলপ্লাজা, মেট্রো স্টেশন ও পার্কিং এলাকা, সব জায়গার ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।
উচ্চ সতর্কতায় রাজধানী
বিস্ফোরণের পর গোটা দিল্লিকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, মেট্রো ও বাস টার্মিনালে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। শহরজুড়ে পুলিশের টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।
লালকেল্লার মতো উচ্চ নিরাপত্তা অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় এই বিস্ফোরণ রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ফিদায়িন হামলার সম্ভাবনা সত্যি হলে, তা শুধু দিল্লির নয়, দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থার উপরই এক গুরুতর সতর্কবার্তা।
এক প্রবল শব্দে যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সোমবার সন্ধ্যায়, তার রেশ এখনো কাটেনি দিল্লির বুক থেকে। শহর জুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন, কে বা কারা এই বিস্ফোরণের নেপথ্যে?


