কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ (jairam-ramesh) বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বছর কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য G7 সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না, যাকে তিনি একটি ‘বড় কূটনৈতিক ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। X-এ একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন যে গত ছয় বছরে প্রথমবারের মতো ভারত এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবে না।
রমেশের বক্তব্য (jairam-ramesh)
তিনি বলেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক নীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য এই ধরনের ফোরামে ভারতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি(jairam-ramesh)। তিনি আরও বলেন, “২০১৪ সালের পরেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের আমন্ত্রণের প্রথা অব্যাহত ছিল। কিন্তু এখন, ছয় বছরে প্রথমবার, বিশ্বগুরু কানাডার সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন না। যতই ব্যাখ্যা দেওয়া হোক, এটি আরেকটি বড় কূটনৈতিক ভুল।”
G7 সম্মেলন ও ভারতের ঐতিহ্য
জয়রাম রমেশ(jairam-ramesh) জানান, ১৫-১৭ জুন, ২০২৫ তারিখে কানাডার আলবার্টার কানানাস্কিসে অনুষ্ঠিতব্য G7 সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং জার্মানির চ্যান্সেলর অংশ নেবেন। এছাড়া ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের আগে G7 আসলে G8 ছিল, যেখানে রাশিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তিনি G8 সম্মেলনে নিয়মিত অংশ নিতেন এবং তাঁর কণ্ঠস্বর বিশ্ব মঞ্চে শ্রদ্ধার সঙ্গে শোনা হতো। বিশেষ করে, ২০০৭ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত G8 সম্মেলনে ড. সিং এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের যৌথ উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনার জন্য বিখ্যাত ‘সিং-মার্কেল ফর্মুলা’ উন্মোচিত হয়েছিল।
ভারত-কানাডা সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
মোদীর সম্ভাব্য অনুপস্থিতির পিছনে ভারত-কানাডা সম্পর্কের টানাপোড়েনকে দায়ী করা হচ্ছে। গত বছর কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারত সরকারের বিরুদ্ধে খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন, যা ভারত তীব্রভাবে অস্বীকার করে এবং ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেয়।
এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এই ইস্যুতে স্পষ্ট কোনও মন্তব্য করেননি, তবে তিনি বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের কথা বলেছেন। ভারত আশা করছে, কার্নি ট্রুডোর তুলনায় আরও দায়িত্বশীল আচরণ করবেন এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি ও সমালোচনা
জয়রাম রমেশ (jairam-ramesh)বিজেপি সরকারের উপর আরেকটি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, যেখানে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প গত শুক্রবার দাবি করেন যে তাঁর প্রশাসন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে মধ্যস্থতা করেছে এবং বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ প্রতিরোধ করেছে।
এই দাবি পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা এবং ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর পরবর্তী উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। রমেশ বলেন, “মার্কিন মধ্যস্থতার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার অনুমতি দেওয়া এবং ‘নিরপেক্ষ স্থানে’ আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া ভারতের দশকের পুরনো বিদেশ নীতিকে উল্টে দেওয়ার একটি ভুল।”
পহেলগাঁও হামলা ও অপারেশন সিঁদুর
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন, যার মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে লোকজনকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হামলার জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর ’ শুরু করে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়।
এই অপারেশনে ১০০-এর বেশি জঙ্গি নিহত হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী এই অপারেশনকে জাতির ‘মা, বোন ও কন্যাদের’ উৎসর্গ করেন, কারণ হামলায় নিহতদের স্ত্রীদের সিঁদুর মুছে দেওয়া হয়েছিল। তবে, ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি ভারতের দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ আলাদা । পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে হয়েছে।
নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম রায় অমান্য, শিক্ষা দপ্তরের ৪ কর্তাকে আইনি নোটিস
কংগ্রেসের অভিযোগ
রমেশ অভিযোগ (jairam-ramesh)করেছেন যে মোদী এবং তাঁর সরকার ট্রাম্পের এই দাবির বিরুদ্ধে নীরব রয়েছেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প গত ২১ দিনে ১০ বার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কেউ এই বিষয়ে মুখ খোলেননি।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ভারত কি মার্কিন মধ্যস্থতা মেনে নিয়েছে? ভারত কি নিরপেক্ষ স্থানে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় সম্মত হয়েছে? এবং এর বিনিময়ে ভারত কি মার্কিন চাপে অটোমোবাইল বা কৃষি খাতে বাজার খুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে?
জয়রাম রমেশের(jairam-ramesh) এই সমালোচনা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান এবং বিজেপি সরকারের নীতির উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। G7 সম্মেলনে মোদীর সম্ভাব্য অনুপস্থিতি এবং ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি ভারতের বিদেশ নীতির ধারাবাহিকতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ভারতের বৈশ্বিক প্রভাব এবং স্বাধীন কূটনৈতিক অবস্থান রক্ষায় এই ঘটনাগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। আগামী দিনে সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং কানাডার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।