১৪টি হাসপাতালে নেই আইসিইউ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই শৌচালয়, CAG রিপোর্টে চাঞ্চল্য

নয়াদিল্লি: দিল্লির স্বাস্থ্যখাতে ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাঅডিটর জেনারেল (CAG)-এর নতুন রিপোর্টে দিল্লির স্বাস্থ্যব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, কর্মী সংকট এবং তহবিলের অপব্যবহার নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। এই…

নয়াদিল্লি: দিল্লির স্বাস্থ্যখাতে ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাঅডিটর জেনারেল (CAG)-এর নতুন রিপোর্টে দিল্লির স্বাস্থ্যব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, কর্মী সংকট এবং তহবিলের অপব্যবহার নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। এই রিপোর্ট আজ দিল্লি বিধানসভায় পেশ হতে যাচ্ছে এবং এতে স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা নানা ত্রুটি ও সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে।

১. হাসপাতালগুলিতে জরুরি চিকিৎসা সেবা নেই
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দিল্লির ২৭টি হাসপাতালের মধ্যে বেশ কিছু হাসপাতাল জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। ১৪টি হাসপাতাল ICU সুবিধা ছাড়াই চলছে, ১৬টি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই, ৮টি হাসপাতাল অক্সিজেন সরবরাহ থেকে বঞ্চিত এবং ১৫টি হাসপাতালের মর্চুয়ারি নেই। এমনকি ১২টি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পর্যন্ত নেই।

kolkata24x7-sports-News

   

২. মোহল্লা ক্লিনিক ও AYUSH ডিসপেনসারির দুরবস্থা
মোহল্লা ক্লিনিকগুলোতে মৌলিক সুবিধার অভাব। শৌচাগার, পাওয়ার ব্যাকআপ, চেক-আপ টেবিল, এসব প্রাথমিক সুবিধাও অনেক ক্লিনিকে নেই। একই অবস্থা AYUSH ডিসপেনসারির। এভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বোত্তম পরিবেশ না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।

৩. স্বাস্থ্যকর্মী সংকট
দিল্লির হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব বেশ তীব্র আকার ধারণ করেছে। নার্সের ২১%, প্যারামেডিকের ৩৮% এবং কিছু হাসপাতালের ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি ৫০%-৯৬% পর্যন্ত। এই অভাবের কারণে রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে।

৪. হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহৃত হচ্ছে না
রাজীব গান্ধী এবং জানকপুরী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার, ICU বেড এবং প্রাইভেট রুমগুলোর অধিকাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে না। এছাড়া, কিছু ট্রমা সেন্টারে জরুরি চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, যা চরম অস্বস্তির সৃষ্টি করছে।

৫. কোভিড তহবিলের অপব্যবহার
কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া জন্য বরাদ্দ করা ৭৮৭.৯১ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৫৮২.৮৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া, ৩০.৫২ কোটি টাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এবং ৮৩.১৪ কোটি টাকা ওষুধ ও PPE কিটের জন্য রাখা হয়েছিল, কিন্তু তা ব্যবহার হয়নি। এটি সরকারের দায়িত্বহীনতার একটি বড় উদাহরণ।

৬. হাসপাতাল শয্যার অভাব
দিল্লি সরকার ৩২,০০০ নতুন হাসপাতাল শয্যা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। মাত্র ১,৩৫৭টি শয্যা যোগ করা হয়েছে, যা মোট শয্যার ৪.২৪%। একাধিক হাসপাতাল ১০০%-এর বেশি রোগী ধারণ করছে, ফলে রোগীদের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

৭. হাসপাতাল প্রকল্পে বিলম্ব ও অতিরিক্ত খরচ
বড় হাসপাতাল প্রকল্পগুলোতে ৩-৬ বছরের বিলম্ব হয়েছে এবং এতে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৩৮২.৫২ কোটি টাকা। ইন্দিরা গান্ধী হাসপাতাল, বুরারি হাসপাতাল এবং MA ডেন্টাল Phase-II-এর প্রকল্পও এই বিলম্বের কারণে সমস্যায় পড়েছে।

৮. সার্জারির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা
লোক নায়ক হাসপাতালের রোগীরা সাধারণ সার্জারি করতে ২-৩ মাস অপেক্ষা করছেন। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জন্য অপেক্ষার সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬-৮ মাসে। CNBC হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক সার্জারির জন্য রোগীদের ১২ মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

সরকারের জন্য একটি কঠিন সতর্কবার্তা
এই রিপোর্টটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, দিল্লির স্বাস্থ্যখাতে সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো ব্যবহৃত হচ্ছে না, কর্মী সংকট তীব্র, এবং সরকারের বরাদ্দ তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। এটি সরকারের জন্য একটি কঠিন সতর্কবার্তা, যাতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং এই সংকট সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।