আগামী ২৯ ও ৩০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুই দিনের সরকারি সফরে জাপান যাচ্ছেন। এই সফরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ১৫তম ভারত-জাপান বার্ষিক সম্মেলন, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। বৈঠকটি হবে ২৯ এবং ৩০ আগস্ট। এটাই হবে মোদীর প্রথম বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে। ফলে দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে এই সফরের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করা হচ্ছে।
সাত বছর পর শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সফর
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী শেষবার শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক উদ্দেশ্যে জাপান সফর করেছিলেন ২০১৮ সালে। তারপর একাধিকবার তিনি টোকিও গিয়েছেন, তবে সেগুলো মূলত বহুপাক্ষিক সম্মেলন বা আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। প্রায় সাত বছর পর এবারের সফর একেবারেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকেই প্রাধান্য দেবে। তাই এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে।
অষ্টম সফর হিসেবে বিশেষ তাৎপর্য
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মোদীর এটি অষ্টম জাপান সফর। ২০১৪ সাল থেকে তিনি নিয়মিতভাবে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ককে দৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন। বুলেট ট্রেন প্রকল্প, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বাণিজ্য বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত বিনিময়ের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই দুই দেশ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এবারের সফরে এই বিষয়গুলো আরও গতি পাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
সম্ভাব্য আলোচনার মূল বিষয়
ভারত-জাপান বার্ষিক সম্মেলনে দুই প্রধানমন্ত্রী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা করবেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
অবকাঠামো উন্নয়ন ও বুলেট ট্রেন প্রকল্প: মুম্বই-আহমেদাবাদ হাই-স্পিড রেল করিডরের কাজ কতটা অগ্রসর হয়েছে, তার মূল্যায়ন হবে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ: ভারতীয় বাজারে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করা নিয়ে নতুন চুক্তি হতে পারে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা: ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয় আলোচনায় থাকবে।
প্রযুক্তি ও সবুজ শক্তি: সেমিকন্ডাক্টর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে যৌথ গবেষণা ও বিনিয়োগের প্রসঙ্গও আসবে।
ইন্দো-প্যাসিফিক ও কৌশলগত সহযোগিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও জাপান বর্তমানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দুই গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ভারসাম্য করতে দুই দেশই কৌশলগত সহযোগিতা বাড়াতে চায়। কোয়াড ব্লকের (Quad) সদস্য দেশ হিসেবে ভারত-জাপান অংশীদারিত্বে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে এই বৈঠক।
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক
শুধু কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিক নয়, ভারত ও জাপানের মধ্যে রয়েছে গভীর সাংস্কৃতিক সম্পর্কও। বৌদ্ধ ধর্মের মাধ্যমে বহু শতক আগে থেকেই দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে। মোদীর আগের সফরগুলিতেও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবারের সফরেও শিক্ষাক্ষেত্রে ও সংস্কৃতি বিনিময়ে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সফর?
বিশ্বরাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারত ও জাপান— উভয়ই একে অপরের কাছে অপরিহার্য অংশীদার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন এবং বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে এই সফর দুই দেশের জন্যই নতুন কূটনৈতিক বার্তা বহন করবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিক থেকেও আগামিদিনে আরও দৃঢ় হবে।