পাঞ্জাবের তারন তারান জেলার একটি সীমান্ত গ্রামের কৃষি জমি থেকে রবিবার, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF) এবং পাঞ্জাব পুলিশের যৌথ অভিযানে একটি ড্রোন উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনা পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাদক পাচার এবং অনুপ্রবেশের চেষ্টাকে ব্যর্থ করার আরেকটি সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিএসএফ-এর একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “নার্কো-ড্রোনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযানের অংশ হিসেবে, সতর্ক বিএসএফ সেনারা পাঞ্জাব পুলিশের সহযোগিতায় আরও একটি ড্রোন জব্দ করেছে।”
বিএসএফ-এর বিবৃতি অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যায় নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিএসএফ এবং পাঞ্জাব পুলিশের একটি যৌথ অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে রাত ৭:০১টার দিকে তারন তারান জেলার ডাল গ্রামের পাশে একটি কৃষি জমি থেকে একটি ‘ডিজেআই এয়ার ৩এস’ মডেলের ড্রোন উদ্ধার করা হয়। বিএসএফ জানিয়েছে, সীমান্তে মোতায়েন করা শক্তিশালী প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা এবং সেনাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এই ড্রোনকে পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে বিএসএফ মাদক পাচার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে।
এটি প্রথম ঘটনা নয়। গত ৪ মার্চ ২০২৫-এ, বিএসএফ আমৃতসর জেলার ওয়ান গ্রামের পাশে একটি কৃষি জমি থেকে আরেকটি ‘ডিজেআই এয়ার ৩এস’ ড্রোন উদ্ধার করেছিল। বিএসএফ-এর পাবলিক রিলেশনস অফিসার (পিআরও) একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন, “নার্কো-ড্রোনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে, সতর্ক বিএসএফ সেনারা আজ আরও একটি ড্রোন জব্দ করেছে। সকাল ১১:০৫টার দিকে আমৃতসর জেলার ওয়ান গ্রামের পাশে একটি কৃষি জমি থেকে এটি উদ্ধার করা হয়।” তিনি আরও জানান, “সীমান্তে মোতায়েন করা উন্নত প্রযুক্তি এবং বিএসএফ-এর অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টা মাদক পাচার এবং অবৈধ ড্রোনের অনুপ্রবেশকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।”
এছাড়াও, গত মাসে, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫-এ, পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার সীমান্ত এলাকায় পৃথক অভিযানে বিএসএফ একটি পিস্তল এবং এক প্যাকেট সন্দেহজনক হেরোইন উদ্ধার করেছিল। বিএসএফ-এর গোয়েন্দা শাখার তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। ফিরোজপুরের তিন্দিওয়ালা গ্রামের কাছে একটি কৃষি জমিতে অনুসন্ধানের সময় একটি গ্লক পিস্তল উদ্ধার করা হয়, যা সাদা আঠালো টেপে মোড়া এবং একটি লোহার হুকের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এই ঘটনাগুলো সীমান্তে অবৈধ কার্যকলাপ দমনে বিএসএফ-এর ক্রমাগত প্রচেষ্টার প্রমাণ বহন করে।
পাঞ্জাবের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোনের মাধ্যমে মাদক এবং অস্ত্র পাচারের ঘটনা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই ড্রোনগুলো প্রায়শই পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয় এবং মাদকদ্রব্য, অস্ত্র এমনকি বিস্ফোরক পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। তারন তারান, আমৃতসর এবং ফিরোজপুরের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলো এই অবৈধ কার্যকলাপের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। বিএসএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ সালে এখন পর্যন্ত শতাধিক ড্রোন উদ্ধার করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই চিনে তৈরি।
এই ঘটনাগুলো শুধু মাদক পাচারের সমস্যাই নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ড্রোনগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সীমান্ত পেরিয়ে আসে এবং ছোট আকারের কারণে সহজে ধরা পড়ে না। তবে বিএসএফ-এর উন্নত প্রযুক্তি, যেমন ড্রোন-বিরোধী রাডার সিস্টেম এবং তাপীয় ইমেজিং, এই হুমকি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিএসএফ এবং পাঞ্জাব পুলিশের সমন্বিত প্রচেষ্টা এই অঞ্চলে অপরাধ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনেছে। তারন তারানের ডাল গ্রামে উদ্ধার হওয়া ড্রোনটি পাকিস্তান থেকে মাদক পাচারের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে। এই ড্রোনের সঙ্গে কোনও মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়নি, তবে এটি পড়ে যাওয়ার আগে প্যাকেট ফেলে দিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
পাঞ্জাব পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা বিএসএফ-এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। এই ড্রোন উদ্ধারের পর আমরা এলাকায় আরও তল্লাশি চালাচ্ছি এবং তদন্ত শুরু করেছি।” স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় প্রায়ই ড্রোনের শব্দ শোনা যায়, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
তারন তারানের ডাল গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা রাতে মাঝে মাঝে ড্রোনের শব্দ শুনি। এটা আমাদের জন্য ভয়ের বিষয়। বিএসএফ যে এগুলো ধরছে, তাতে আমরা স্বস্তি পাচ্ছি।” আরেকজন কৃষক জানান, “আমাদের জমিতে এসব জিনিস পড়লে আমরা ভয় পাই। পুলিশ আর বিএসএফ না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।”
বিএসএফ-এর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, “আমরা সীমান্তে আরও উন্নত প্রযুক্তি মোতায়েন করছি। ড্রোন-বিরোধী ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে, যাতে এই ধরনের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়।” তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। পাকিস্তান থেকে আসা এই ড্রোনগুলো ক্রমশ উন্নত হচ্ছে, এবং তাদের গতিবিধি ধরতে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
৯ মার্চ ২০২৫-এ তারন তারান সীমান্তে ড্রোন উদ্ধারের এই ঘটনা বিএসএফ এবং পাঞ্জাব পুলিশের সতর্কতা ও দক্ষতার প্রমাণ। এই অঞ্চলে মাদক পাচার এবং অবৈধ কার্যকলাপ রুখতে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়দের আস্থা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই হুমকি মোকাবিলায় আরও কঠোর পদক্ষেপ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।