লখনৌ: উত্তরপ্রদেশের শান্ত কবির নগর জেলা এখন চাঞ্চল্যের কেন্দ্রবিন্দু। রাজ্যের অ্যান্টি-টেরর স্কোয়াড (ATS) এক বিস্তৃত তদন্তে এমন এক বিদেশি অর্থচক্রের হদিস পেয়েছে, যা রাজ্যের বিভিন্ন মাদ্রাসায় বেআইনি পথে টাকা পৌঁছে দিচ্ছিল। এই মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন এক ব্রিটিশ নাগরিক শামসুল হুদা খান।
ATS সূত্রে জানা গেছে, শামসুল হুদা খান উত্তরপ্রদেশের শান্ত কাবির নগর জেলার একাধিক এনজিওর মাধ্যমে সরকারি অনুমতি ছাড়াই বিদেশি অনুদান পাঠাচ্ছিলেন। এই অর্থ প্রধানত ব্রিটেন এবং কিছু মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে আসত, যার একটি বড় অংশ পাকিস্তান এবং জম্মু-কাশ্মীরের চরমপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে যুক্ত চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ঢুকত বলে সন্দেহ।
রুশ আক্রমণ মোকাবিলায় বিশেষ অস্ত্র পেল ইউক্রেন, কে করল সাহায্য?
এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, “এটি কোনও সাধারণ অর্থ লেনদেন নয়। তদন্তে দেখা গিয়েছে, এই ফান্ডগুলি নির্দিষ্ট মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষার আড়ালে প্রচারমূলক এবং বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছিল। সরকারিভাবে রেজিস্টার করা হয়নি এমন বহু NGO এই অর্থ পাচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।”
শামসুল হুদা খান লন্ডনের এক এনজিও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তার নামে তিনি কয়েক বছর ধরেই সক্রিয় ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার যোগাযোগ পাকিস্তানভিত্তিক কিছু ইসলামিক রিলিফ সংগঠনের সঙ্গে বেড়ে যায়, যা ATS-এর নজরে আসে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে, খান নিয়মিতভাবে ভারতীয় মাটিতে থাকা কিছু ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, যারা এই বিদেশি তহবিল বিভিন্ন মাদ্রাসায় বণ্টন করত। বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দেশে ঢুকেছে বলে জানা গেছে।
ATS সূত্রের দাবি, এই অর্থের একটি অংশ জম্মু ও কাশ্মীরের কিছু উগ্রপন্থী নেটওয়ার্কে পৌঁছাচ্ছিল, যারা নিজেদের কার্যক্রম চালাতে এই তহবিল ব্যবহার করত। পাকিস্তান থেকে পাঠানো অর্থের উৎসও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই আর্থিক চক্রের পেছনে একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে ভারতের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরি করা এবং শিক্ষার মাধ্যমে ধর্মীয় বিভাজন বাড়ানো।
উত্তরপ্রদেশ ATS ইতিমধ্যেই শামসুল হুদা খানের বিরুদ্ধে বৈদেশিক অনুদান (FCRA) আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (PMLA) এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ (UAPA) ধারায় মামলা দায়ের করেছে। তাঁকে শীঘ্রই ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিশ পাঠানো হবে বলে সূত্রের খবর।রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, “এ ধরনের বেআইনি বিদেশি ফান্ডিং কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না। মাদ্রাসাগুলির ওপর কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে যাতে শিক্ষার নামে কোনও বেআইনি কার্যকলাপ না ঘটে।”
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন পড়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বিদেশি শক্তি এবং স্থানীয় এজেন্টরা একযোগে ভারতের সামাজিক বন্ধন ভাঙার চেষ্টা করছে।” অপরদিকে, বিরোধী দলগুলির অভিযোগ সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে অকারণে টার্গেট করছে। তবে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন “শিক্ষার জায়গায় যদি বিদেশি অর্থে রাজনীতি ঢুকে পড়ে, তাহলে প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে,” মন্তব্য এক স্থানীয় শিক্ষককের।


