পহেলগাঁওয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে এবার মুখ খুললেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (bratya basu) । জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া হাড় হিম করা জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত, যাদের অধিকাংশই পর্যটক। শোকার্ত পরিবারবর্গ স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে সুর চড়িয়েছেন ব্রাত্য বসুও (bratya basu)। এর আগেও সমাজ মাধ্যমে তিনি বলেছেন মোদী সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি।
“আমাদের রক্ষা করতে না পারলে ভোট চাইতে আসবেন না,” এই বার্তা শোকাহত পরিবারগুলি বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে দিয়েছে। তারা মোদী সরকারের উদাসীনতা এবং দায়িত্বহীনতাকে এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী করছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ক্ষোভের ঢেউ সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার উপর তীব্র আলোকপাত করছে।
“Don’t ask us for votes if you can’t protect us.” That’s what grieving families are telling @BJP4India leaders.
No propaganda can silence the fury of those who lost loved ones due to the Modi Govt.’s indifference and apathy.#PahalgamTerrorAttack pic.twitter.com/aso8PP1kyn
— Bratya Basu (@basu_bratya) April 25, 2025
পহেলগাঁও হামলা এবং নিরাপত্তা ব্যর্থতা
পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোতে এই হামলা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামক পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠীর একটি শাখার । এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তার গুরুতর ঘাটতি প্রকাশ করেছে। বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে, সর্বদলীয় বৈঠকে কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছেন কেন বাইসারানে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ছিল না।
সরকারের ব্যাখ্যা ছিল যে, এলাকাটি সাধারণত জুন মাসে অমরনাথ যাত্রার আগে সুরক্ষিত করা হয়, কিন্তু স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা ২০ এপ্রিল থেকে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া শুরু করে, যা প্রশাসনের অজানা ছিল। এই ব্যাখ্যা শোকার্ত পরিবার এবং সাধারণ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে।
বারুইপুরে গুপ্ত যন্ত্র? শুভেন্দুর অভিযোগে তোলপাড় রাজ্য, কী জানাল পুলিশ
শোকার্ত পরিবারের ক্ষোভ (bratya basu)
পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের পরিবারগুলি সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতাকে দায়ী করে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “দেশ নাগরিকদের হারিয়ে শোক করছে, আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনী মঞ্চে তালি সংগ্রহে ব্যস্ত।”
আরেকটি পোস্টে মোদী সরকারকে সন্ত্রাসবাদ রোধে ব্যর্থ বলে সমালোচনা করা হয়েছে। পরিবারগুলির মতে, সরকারের প্রচারণা এবং নির্বাচনী বক্তৃতা তাদের ক্ষতির বোঝা কমাতে পারে না। তারা দাবি করছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বিজেপি নেতারা তাদের কাছে ভোট চাইতে আসার কোনো অধিকার রাখে না। এবং তাদের সুরে সুর মিলিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীও (bratya basu)।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা, আটারি সীমান্ত বন্ধ করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের মান নামিয়ে আনা। তবে, বিরোধী দলগুলি এই পদক্ষেপগুলিকে প্রতীকী এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য বলে সমালোচনা করেছে।
রাহুল গান্ধী, যিনি পহেলগাঁওয়ে আহত পর্যটকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেছেন, বলেছেন, “নিরাপত্তার ত্রুটি গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।” আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতকরণের ব্যবহারিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, জিজ্ঞাসা করে এটি কীভাবে কার্যকর হবে যদি ভারতের জল সংরক্ষণ ক্ষমতা সীমিত থাকে।
জনরোষ এবং সামাজিক মাধ্যম
সামাজিক মাধ্যমে শোকার্ত পরিবারগুলির বক্তব্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “শহীদদের রক্ত দিয়ে কি ভোটের ফসল কাটতে হবে?” এই ধরনের মন্তব্য সরকারের প্রতি জনগণের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ প্রকাশ করে। অনেকে মনে করেন, মোদী সরকার নির্বাচনী রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকলেও নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়নি। এই ক্ষোভ নির্বাচনের আগে বিজেপির জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
সরকারের প্রতিশ্রুতি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলাকে ‘ভারতের শান্তি ও অগ্রগতির উপর আক্রমণ’ হিসেবে বর্ণনা করে সন্ত্রাসীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সর্বদলীয় বৈঠকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। গোয়েন্দা ব্যুরোর ডিরেক্টর তপন ডেকা হামলার বিবরণ এবং পদক্ষেপ উপস্থাপন করেছেন। তবে, শোকার্ত পরিবারগুলি এই প্রতিশ্রুতি এবং তদন্তের ফলাফল নিয়ে সন্দিহান। তারা দাবি করছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব
পহেলগাঁও জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র। এই হামলা পর্যটকদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করেছে, এবং অনেকে তাদের সফর বাতিল করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই ঘটনা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। রাজ্য সরকার পর্যটকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে পরিবারগুলি এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
পহেলগাঁও হামলা শুধু নিরাপত্তা ব্যর্থতার প্রশ্নই নয়, এটি সরকারের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার পরীক্ষাও। শোকার্ত পরিবারগুলির “ভোট চাইতে আসবেন না” বার্তা বিজেপির জন্য একটি সতর্কবাণী। এই ক্ষোভ নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, যদি সরকার জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তা জোরদার, স্বচ্ছ তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ন্যায়বিচার এখন জরুরি।