ভারত সরকার গুজরাটের কচ্ছের রনে (Border Security) গৌতম আদানি গোষ্ঠীর এনার্জি পার্ক তৈরির জন্য ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংক্রান্ত নিরাপত্তা বিধিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। এই পার্কটি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের একেবারে কাছেই তৈরি হচ্ছে, যা নিয়ে কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে সরকারের বিরুদ্ধে।
গুজরাটের কচ্ছের রনে আদানি গোষ্ঠী সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। তবে এই অঞ্চলের প্রকল্পটি কিছুটা বিতর্কিত হয়ে উঠেছে, কারণ এটি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে। এর আগে, সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বড় কোনও নির্মাণ করতে অনেক বিধিনিষেধ ছিল। তবে, গুজরাট সরকার ২০২৩ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রের কাছে এই বিধিনিষেধ শিথিল করার আবেদন জানায় এবং সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়।
আদানি গোষ্ঠী এই জমি গুজরাট সরকারের কাছ থেকে লিজে পেয়েছে। এই জমি আগে সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে (SECI) দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু SECI এই জমি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও সরকারকে এই জমি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে আদানি গোষ্ঠী নিলামের মাধ্যমে জমিটি লিজে পায়। এই প্রক্রিয়া দেখভাল করেছিল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি।
এর ফলে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রশ্ন তুলেছেন, সীমান্তের এত কাছে একটি বেসরকারি প্রকল্প কেন অনুমোদন দেওয়া হলো। তার মতে, এই ধরনের পদক্ষেপে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর চাপ বাড়বে এবং কৌশলগত অবস্থানে কিছু সমস্যা তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে শত্রু সহজেই আঘাত হানতে পারে। তাহলে কেন একটি বেসরকারি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলো?’
এদিকে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আরও এক দাবি করা হয়েছে, এই প্রকল্পে স্বজনপোষণ চলছে। তাদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের কাছে এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের দাবি, প্রকল্পে প্রটোকল বদলানোর ফলে সরকার নিজেদের ব্যবসায়িক বন্ধুদের সুবিধা দিতে চাইছে।
এর মধ্যে গুজরাটের কচ্ছের রনের খাভড়া এলাকায় আদানি গোষ্ঠী ৪৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা লিজে নিয়েছে। এই জায়গায় ৩০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পটি কাজ করতে শুরু করলে, গুজরাট সরকারের কাছে নতুন নতুন সুযোগের সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত নভেম্বরে আদানি গোষ্ঠী একটি ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিল। যেখানে তাদের বিরুদ্ধে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের বরাত পেতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও সেই আইনের ভিত্তিতে আদানি গোষ্ঠীকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল, তা সম্প্রতি স্থগিত করেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়ম বদলানোর ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের সব সম্পদ প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কি দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়মও বদলে ফেলতে হবে?’
এটি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে, এই বিতর্কের ফলে ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক আরও প্রশ্ন উঠতে পারে, যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
তবে, রাজনীতিকরা এই বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা শুরু করেছেন, এবং এটি আগামী দিনে আরও বড় বিতর্কের রূপ নিতে পারে। দেশটির নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন প্রশ্নে এই ধরনের পদক্ষেপের প্রভাব রাজনৈতিক মহলে আরও বেশি অনুভূত হবে।