নাবালিকা স্ত্রীয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, নিগ্রহ হিসেবে মান্যতা দিল হাইকোর্ট

বম্বে হাইকোর্টের (Bombay High Court) নাগপুর বেঞ্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে যে নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক (Consensual sex) স্থাপনও আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণ…

Consensual sex with minor wife is rape: High Court upholds 10-year jail for man

বম্বে হাইকোর্টের (Bombay High Court) নাগপুর বেঞ্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে যে নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক (Consensual sex) স্থাপনও আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই রায়ের মাধ্যমে আদালত স্পষ্ট করেছে যে, আইনের আওতায় নাবালিকাদের সম্মতির কোনও বৈধতা নেই। 

বদ্রীনাথ ধামের দরজা বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু, আদি কেদারেশ্বরকে অন্নকুট নিবেদন

   

নাগপুর বেঞ্চ এই রায় দেন এক মামলার প্রেক্ষিতে, যেখানে এক ব্যক্তি তার নাবালিকা স্ত্রীকে ধর্ষণ করার জন্য অভিযুক্ত হন। মামলায় প্রমাণিত হয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, যদিও তার স্ত্রী নাবালিকা। স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে লোকটিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা হাইকোর্টও বহাল রাখে।

ভারতের বর্তমান আইনে ১৮ বছরের নিচে কাউকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। এই বয়সসীমার নিচে কারও সম্মতি আইনত স্বীকৃত নয়। যৌন অপরাধ সম্পর্কিত সুরক্ষা আইন (POCSO Act) ও ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে এই বিষয়টি সুস্পষ্ট।

বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতিরা তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, “একজন নাবালিকার সম্মতি দেওয়ার অধিকার নেই। যদি নাবালিকা স্ত্রী সম্পর্কেও এমন ঘটনা ঘটে, তবে তা আইনত ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হবে।” বিচারপতিরা আরও যোগ করেন যে, এই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে যে কোনও ধরনের আইনি সুরক্ষা বা ছাড় দাবি করা যাবে না।

পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাজাজি টাইগার রিজার্ভ

এই মামলায় নাবালিকা মেয়েটির অভিযোগ ছিল যে, তার স্বামী তাকে একাধিকবার শারীরিক নির্যাতন করেছে। মেয়েটি আদালতে জানিয়েছে, সে ওই সময় মাত্র ১৭ বছর বয়সী ছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীরা দাবি করেন, মেয়েটি নিজেই শারীরিক সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছিল। তবে আদালত এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, একজন নাবালিকার সম্মতি দেওয়ার অধিকার আইনত অগ্রহণযোগ্য।

নাগপুর বেঞ্চের এই রায় কেবল একজন অভিযুক্তের সাজা নিশ্চিত করেছে নয়, বরং নাবালিকা বিবাহ ও তাদের উপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়েও শক্ত বার্তা দিয়েছে।

ভারতে নাবালিকা বিবাহ একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। অনেক গ্রামীণ ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নাবালিকাদের বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয়। যদিও ২০০৬ সালে প্রবর্তিত প্রহিবিশন অফ চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট-এ এই ধরনের বিবাহ অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, তবুও অনেক জায়গায় এখনও এই প্রথা প্রচলিত।

আইন অনুসারে, নাবালিকা মেয়েদের ১৮ বছরের আগে এবং ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিয়ে করা অপরাধ। কিন্তু বাস্তবে এটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ ও অধিকার হরণ করা হয়।

বম্বে হাইকোর্টের এই রায় আরও একবার স্পষ্ট করল যে, নাবালিকা স্ত্রীর প্রতি কোনও ধরনের যৌন নির্যাতন মেনে নেওয়া যাবে না।

এই রায়ের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা সমাজের কাছে পৌঁছেছে। নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা শুধু অনৈতিক নয়, বরং এটি আইনত অপরাধ।

বিচারপতিরা তাদের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন যে, সমাজের এই প্রথাগত ধারণাগুলো ভাঙা প্রয়োজন, যেখানে নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়। এই ধরনের অপরাধ শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নয়, গোটা সমাজের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ওপর আঘাত হানে।

বম্বে হাইকোর্টের এই রায় ভবিষ্যতে আরও অনুরূপ মামলার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় নাবালিকা স্ত্রীর অধিকার রক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ। এটি নাবালিকাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।

তবে শুধুমাত্র রায়ই নয়, এই সমস্যার সমাধানে আরও ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন। আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি দরকার সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি। নাবালিকা বিবাহ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের মধ্যেও পরিবর্তন আনা জরুরি।

দিল্লির সরাই কালে খান চকের নাম পরিবর্তন, নতুন নাম ঘোষণা

বম্বে হাইকোর্টের এই রায় ভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি শুধু নাবালিকাদের প্রতি সংঘটিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা নয়, বরং সমাজে ন্যায় ও সমতার প্রতিষ্ঠায় এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ।

সমাজে নাবালিকা বিবাহের মতো সমস্যা দূর করতে হলে আইন ও প্রশাসনের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকা উচিত।