ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং অপারেশন সিঁদুর এর মধ্যে ই আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বোমা হামলার (bomb-threat) হুমকি দেওয়া হয়েছে হয়েছে। গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (জিসিএ) একটি ই-মেইল পেয়েছে, যেখানে লেখা আছে, “আমরা তোমাদের স্টেডিয়াম উড়িয়ে দেব।” ই-মেইলটি ‘পাকিস্তান জেকে’ নামক একটি আইডি থেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই হুমকির (bomb-threat) পর অমদাবাদ পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করেছে এবং স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই ঘটনা ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, যেখানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালিয়েছে।
হুমকির বিবরণ (bomb-threat)
মঙ্গলবার ভোরে জিসিএ-র কাছে পাঠানো ই-মেইলটিতে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা ছিল “আমরা তোমাদের স্টেডিয়াম উড়িয়ে দেব।” কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়াই এই হুমকি আহমেদাবাদ পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। একজন সিনিয়র আইপিএস অফিসার জানিয়েছেন, ই-মেইলটি পাকিস্তান থেকে পাঠানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম, যা বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যেখানে আগামী সপ্তাহে দুটি আইপিএল ম্যাচের আয়োজন চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে হুমকিটিকে (bomb-threat) অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল মঙ্গলবার ভোরে স্টেডিয়ামে পৌঁছে পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি চালায়। এখনও পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক বস্তু পাওয়া যায়নি, তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে।
অপারেশন সিঁদুর ও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত কঠোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে। এই অভিযানে ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, সিয়ালকোট এবং পিওজেকে-র পাঁচটি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালিয়ে প্রায় ৯০ জন সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে।
এই হামলা পাকিস্তানের জন্য শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে, এর পর পাকিস্তান সেনা পুঞ্চ ও তাংধারে বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু করে, যাতে ১৫ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়। এই প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হুমকি ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
আহমেদাবাদ পুলিশ সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় ই-মেইলের উৎস অনুসন্ধান করছে। স্টেডিয়ামের চারপাশে অতিরিক্ত পুলিশ, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল (bomb-threat) এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষী (NSG) মোতায়েন করা হয়েছে। গুজরাট পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা কোনো ঝুঁকি নিচ্ছি না। আইপিএল ম্যাচের জন্য স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের সমাগম হবে, তাই নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।” সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতেও কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।
ধোনির নাটকীয় ছক্কায় পয়েন্ট টেবিলে ধাক্কা খেল KKR
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই হুমকি (bomb-threat) ভারত জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ এবং আশঙ্কা তৈরী করেছে। এক্স-এ একাধিক পোস্টে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান জঙ্গিদের সমর্থন করছে এবং এখন তারা আমাদের স্টেডিয়ামে হামলার হুমকি দিচ্ছে।” শিরোমণি অকালি দলের নেতা সুখবীর সিং বাদল এই ধরনের হুমকির তীব্র নিন্দা করে বলেন, “এটি পাকিস্তানের কাপুরুষোচিত মানসিকতার প্রমাণ। ভারত এই হুমকির উপযুক্ত জবাব দেবে।” পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানও বলেন, “সাধারণ মানুষ ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলোকে লক্ষ্য করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”
প্রাক্তন কূটনীতিক মঞ্জু সেঠ সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনা ও আতঙ্কবাদীদের মধ্যে সংযোগের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, “এই হুমকি পাকিস্তানের দ্বৈত নীতির আরেকটি প্রমাণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।” তিনি ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার পরামর্শ দেন।
প্রেক্ষাপট ও অতীতের ঘটনা
নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এর আগেও ২০২৩ সালে ভারত-পাকিস্তান বিশ্বকাপ ম্যাচের সময় বোমা হামলার হুমকি (bomb-threat) দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় মধ্যপ্রদেশের করণ মাভি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় খ্যাতি পাওয়ার জন্য এই হুমকি দিয়েছিলেন। একইভাবে, খালিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনও বিশ্বকাপকে “বিশ্ব সন্ত্রাস কাপ” করার হুমকি দিয়েছিলেন। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম ভারতের জন্য কৌশলগত ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
জনজীবনে প্রভাব
এই হুমকি অমদাবাদের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ প্যাটেল বলেন, “আমরা আইপিএল ম্যাচ উপভোগ করতে চাই, কিন্তু এই হুমকি আমাদের মনে ভয় তৈরি করেছে।” তবে, পুলিশ জনগণকে শান্ত থাকার এবং গুজব এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। স্টেডিয়ামের আশপাশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বোমা হামলার হুমকি (bomb-threat) ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করলেও, পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং এই হুমকি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। অমদাবাদ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই হুমকির উৎস উদঘাটন এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ভারতের জনগণ এই সংকটে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে।