‘মোদী বিরোধী’ সঞ্জয়ই কী বিজেপির পরবর্তী সভাপতি? সঙ্ঘের কৌশলে চিন্তায় মোদী-শাহ

শিয়রে সঙ্কট মোদী-শাহের (Narendra Modi), কারণ আর কিছুদিনের মধ্যেই বিজেপির (BJP) সর্বভারতীয় সভাপতির নাম ঠিক হতে চলেছে। বিজেপির পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে দলে শুরু হয়েছে…

RSS backed Sanjay Joshi & Vasundhara Raj are on the race to be the next BJP Prez, 'Big trouble' for Modi-Shah

শিয়রে সঙ্কট মোদী-শাহের (Narendra Modi), কারণ আর কিছুদিনের মধ্যেই বিজেপির (BJP) সর্বভারতীয় সভাপতির নাম ঠিক হতে চলেছে। বিজেপির পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে দলে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় উঠে এসেছে সঞ্জয় যোশী (Sanjay Joshi) এবং বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার নাম। আরএসএসের ‘প্রিয় পাত্র’ দুজনেই বিজেপির দীর্ঘদিনের সদস্য এবং দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজ্য স্তরেও তাঁদের জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞতা দলের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।

সঞ্জয় যোশী (Sanjay Joshi) বিজেপির অন্যতম পুরনো সদস্য এবং দলের সাংগঠনিক স্তরে অত্যন্ত দক্ষ একজন নেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গুজরাতের নেতা হয়েও তিনি কঠোর মোদী বিরোধী বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা, নরেন্দ্র মোদী ও সঞ্জয় যোশির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ কারও অজানা নয়। এই সংঘাতের সূত্রপাত গুজরাটে বিজেপির সাংগঠনিক সময় থেকেই। ১৯৯০-এর দশকে বিজেপির সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সঞ্জয় যোশি ছিলেন মোদীর ঘনিষ্ট সহযোগী। কিন্তু রাজনৈতিক কৌশল ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা চলে আসে। বিশেষ করে, ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী নিযুক্ত হওয়ার পর যোশির সঙ্গে তার মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়।

   

মোদী ও যোশির মধ্যে মতবিরোধের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল রাজনৈতিক আদর্শ ও কৌশলগত ভিন্নতা। মোদী উন্নয়নমুখী ও জনমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী যেখানে সঞ্জয় যোশি বরাবরই দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও আদর্শগত দিককে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। এই মতপার্থক্যের কারণে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাঁরা একাধিকবার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।

২০০৫ সালে যোশির বিরুদ্ধে কনক্লেভে একটি বিতর্কিত সিডি প্রকাশিত হওয়ার পর তাকে পদত্যাগ করতে হয়। যদিও পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন, ততদিনে মোদী-যোশি সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। মোদী বিশ্বাস করেন, যোশির কৌশল ও নীতিগত অবস্থান দলের আধুনিকায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে, এবং এ কারণেই তাকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আরও বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

যদিও সঞ্জয় যোশি দলের প্রতি অনুগত থেকে কাজ করে গেছেন, মোদীর সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন দলের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালে মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী বেছে নেওয়ায় মন থেকে মেনে নিতে পারেননি যোশী। এবার এক দশক পর আরএসএস সেই যোশীকেই সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে দাঁড় করিয়ে আসলে মোদী-শাহকে চাপে রাখতে চাইছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল।

অন্যদিকে গত একদশকে ক্ষমতা খর্ব হয়েছে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেরও। রাজপুত-ভূমিতে প্রবল জনপ্রিয় এই নেত্রীকে কার্যত ‘শেষ’ করে গত বিধানসভা ভোটে কার্যত সাইডলাইন করে দেন মোদী-শাহেরা। তাঁর পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়ে অজানা ভজনলাল শর্মাকে। তাতে শুধু বসু্ন্ধরাই নন। এমন সিদ্ধান্তে প্রবল খেপেছিল নাগপুরের সঙ্ঘও। তাই সেই সব হিসেব কষেই পা ফেলতে চলেছে আরএসএস।

কারণ গত দশ বছরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন মোদী-শাহ জুঁটি। রাজনৈতিকভাবে তাঁদের সামলানো একরকম মুশকিল হয়ে পড়েছিল আরএসএসের পক্ষে। এমনকী লোকসভা ভোটের আগে আরএসএসকে ছাড়াই বিজেপি চলতে পারবে-এর মতো জেপি নাড্ডার মন্তব্য বেজায় ক্ষুব্ধ করেছিল নাগপুরকে। তাই গত ভোটে মোদীর হয়ে সাংগঠনিক কাজেই নামেনি সঙ্ঘ সদস্যরা। তার ফলও হাতেনাতে পেয়েছে মোদী-শাহেরা। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে জোট সরকার গড়তে বাধ্য হতে হয়েছে তাঁদের। সুতরাং এবার আর রাশ হালকা করতে চায় না নাগপুর।

তাই আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই দেশের সমস্ত বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছ থেকে এই দুই নেতার নামে সমর্থন প্রত্যাশা করছে মোহন ভগবতের সঙ্ঘ। যদি তা নয় তাহলে মোদী-শাহের বিজেপির সঙ্গে আরএসএসের সরাসরি লড়াই শুরু হতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল। আর তা হলে আগামীতে জোট সরকার নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে মোদীকে।