দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ‘শিশমহল’ বিতর্ক অনেকটাই প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছিল। বিজেপি তাদের প্রচারে এই সরকারি আবাসনকে ‘পাপের মহল’ বলে কটাক্ষ করেছিল। অভিযোগ ছিল, এই মহল তৈরির জন্য কেজরিওয়াল সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে, যা সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয় করার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল।
বিজেপির অভিযোগ ছিল, এই বিলাসবহুল ভবন তৈরি করা হয়েছে যখন দেশের এক বড় অংশ করোনার সংকটে ভুগছিল। খোদ প্রধানমন্ত্রীও অভিযোগ করেন, ‘‘করোনাকালে গোটা দেশ যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, তখন কেজরিওয়াল শিশু মহল তৈরি করছিলেন, যা একেবারে অশ্লীল।’’
তবে, নির্বাচনে ‘শিশমহল’ বিরোধী প্রচারণা চালানোর পর, বিজেপি এবার সোজাসুজি এই ভবনে নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে থাকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে দিল্লির উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনাকে একটি চিঠি লিখে জানানো হয়েছে যে, নতুন মুখ্যমন্ত্রী এই বিতর্কিত ভবনে থাকবেন না। এছাড়াও, বিজেপি চায় যে, ভবনটি শুধুমাত্র সরকারি কাজে ব্যবহৃত হোক।
বিজেপির দিল্লি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, এই বাড়ির মূল জমি ১০ হাজার বর্গমিটার ছিল, কিন্তু বেআইনিভাবে সেটি পুনর্নির্মাণ করে ৫০ হাজার বর্গমিটার এলাকার বিলাসবহুল আবাসনে পরিণত করা হয়েছে। এই বাড়ি তৈরির জন্য যা জমি ব্যবহার করা হয়েছে, তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিজেপির দাবি, এই বাড়ি তৈরি করার জন্য যেসব সরকারি জমি ব্যবহার করা হয়েছে, তা যথাযথভাবে সঠিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা উচিত।
এছাড়া, ৬ নম্বর ফ্ল্যাগস্টাফ রোডের বাংলোও এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। বিজেপি দাবি করছে, এই বাংলোর জমি ‘দখল’ করে কেজরিওয়াল শিশু মহল তৈরি করেছেন এবং এটি পুনরুদ্ধারের জন্য সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ৬ নম্বর ফ্ল্যাগস্টাফ রোডের বাংলো বর্তমানে আবগারি দুর্নীতির তদন্তের আওতায় রয়েছে, এবং বিজেপি চায় যে সেখানে নতুন মুখ্যমন্ত্রী থাকতে না পারেন।
বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, ‘শিশমহল’ নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর থাকার বিষয়টি গেরুয়া শিবিরের ভাবমূর্তির জন্য বিপদজনক হতে পারে। আর তাই তারা চায়, এটি কোনও ভাবেই বিজেপি সরকার পরিচালনার সাথে যুক্ত না হয়ে সরকারের কাজে ব্যবহৃত হোক।
এই চিঠি বিজেপির দিক থেকে একটি বড় পদক্ষেপ এবং এটি রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দলে ভিতরে বিজেপির নেতারা মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রতিফলন। শিশমহল বিরোধী প্রচারের পর, বিজেপি সরকার হলে এই ধরনের বিতর্ক যাতে না উঠে, সেজন্য তাঁরা নতুন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অন্য জায়গায় সরকারি বাসভবন নিশ্চিত করতে চায়।
বিজেপির এই পদক্ষেপটি দিল্লি রাজনীতিতে একটি নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং এটি আরও সুস্পষ্ট করেছে যে, নতুন সরকারের পরিচালনায় কোন ধরনের বিলাসিতার জায়গা থাকবে না।