দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্যের পর এবার বিহার জয়ের লক্ষ্যে কোমর বেঁধে ময়দানে নামছে কেন্দ্রীয় বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব। সেই লক্ষ্যেই এবার পশ্চিমবঙ্গের হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে নজর বাড়িয়েছে বিজেপি। রাজ্যে বসবাসকারী বিহারের স্থায়ী বাসিন্দাদের একাংশকে ফের সংযুক্ত করতে চায় গেরুয়া শিবির। সেই উদ্দেশ্যেই মঙ্গলবার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের জগদ্দলে একাধিক কর্মসূচিতে হাজির হলেন কেন্দ্রীয় কয়লা প্রতিমন্ত্রী সতীশচন্দ্র দুবে।
জগদ্দলের মজদুর ভবনে অনুষ্ঠিত বিজেপির দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং-সহ রাজ্য ও জেলার একাধিক নেতা-কর্মী। সভায় মন্ত্রী দুবে বলেন, “বিহারের বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। দিল্লিতে আমরা জয়ী হয়েছি, এবার লক্ষ্য বিহার। আপনারা যারা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন, কিন্তু আদি বাড়ি বিহারে, তারা যেন ভোটের সময় বিহারে গিয়ে ভোট দেন। বিহারকে বিজেপির হাতে তুলে দেওয়া আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।”
বিহার ও উত্তর ভারতের বহু বাসিন্দা কর্মসূত্রে বা বসবাসের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় রয়েছেন। বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর, জগদ্দল, খড়দহ, টিটাগড়, ভাটপাড়া, কাঁচরাপাড়ার মতো শিল্পাঞ্চলগুলিতে হিন্দিভাষী জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে, এই ভোটারদের যদি পুনরায় সক্রিয় করা যায় এবং মূল রাজ্যের নির্বাচনে ফের যুক্ত করা যায়, তাহলে তা দলীয় কৌশলের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
সতীশচন্দ্র দুবে তাঁর বক্তৃতায় আরও বলেন, “দিল্লিতে আমরা উন্নয়নের বার্তা নিয়ে গিয়েছিলাম, মানুষ আমাদের পাশে থেকেছে। বিহারেও তাই হবে। বিহারের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। রাজ্যের উন্নয়নকে গতিময় করতে হলে বিজেপির হাত শক্ত করতে হবে। বিহারের জনগণ এবার সেই দায়িত্ব পালন করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।”
তিনি এখানেই থেমে থাকেননি। আগামী ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন, “বিহার জয়ের পরে পশ্চিমবঙ্গেও পরিবর্তন আসবে। ২০২৬-এ বাংলাতেও বিজেপি সরকার গঠিত হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপশাসনের অবসান ঘটবে।”
বক্তব্যে উঠে আসে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, শিল্পনীতি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ইস্যুও। তিনি বলেন, “বাংলার মানুষ উন্নয়ন চায়, কর্মসংস্থান চায়। কিন্তু বর্তমান সরকার সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সেই সুযোগেই বিজেপি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে।”
এদিনের কর্মসূচিতে স্থানীয় হিন্দিভাষী বাসিন্দাদের বড় সংখ্যায় উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে মন্ত্রী ও অন্যান্য নেতারা জনসংযোগ গড়ে তোলেন। শোনা যায়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই ধরনের কর্মসূচি আরও জোরদার করবে রাজ্যের বিভিন্ন হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এলাকায়।
সবমিলিয়ে দিল্লির জয়ের পর বিজেপি এবার বিহার জয়ের রণকৌশলেই হাঁটছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের বাংলা দখলের লড়াইটিও এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে দল। কেন্দ্রীয় নেতার বার্তা স্পষ্ট—একবারে দুই ফ্রন্টে লড়াইয়ে নামতে চলেছে গেরুয়া শিবির, এবং তার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে যে অন্যতম কৌশলগত ভূমি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে, তা মঙ্গলবারের কর্মসূচি থেকেই স্পষ্ট।