উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী, প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডির (Sudarshan Reddy) বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে যে, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হয়ে তিনি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা লালু প্রসাদ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করে “দেশের আত্মা বাঁচানোর” কথা বলছেন।
বিজেপি এই বৈঠককে “ভণ্ডামি” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই বিতর্ক ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে তুলেছে। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “কেমন ধরনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আপনি? চার সাজাপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ লালু যাদবের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের আত্মা বাঁচানোর কথা বলছেন? এটি নিছক ভণ্ডামি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, সুদর্শন রেড্ডি ইন্ডিয়া জোটের হয়ে প্রার্থী হয়ে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছেন। লালু যাদবের সঙ্গে সুদর্শন রেড্ডির সাম্প্রতিক বৈঠক, যিনি চার কোটি টাকার গো-খাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তা নিয়ে বিজেপি তীব্র সমালোচনা করেছে।
পাত্র প্রশ্ন তুলেছেন, “একজন প্রাক্তন বিচারপতি কীভাবে এমন ব্যক্তির সঙ্গে নৈতিকতার কথা বলতে পারেন, যিনি দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত?”এই নির্বাচনে এনডিএ-র প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের বিপরীতে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী হিসেবে সুদর্শন রেড্ডিকে মনোনীত করা হয়েছে। বিজেডি এবং বিআরএস-এর ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্তের পর এনডিএ-র জয়ের সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে।
বিজেপি দাবি করছে, সুদর্শন রেড্ডির প্রার্থীত্ব ইন্ডিয়া জোটের “নৈতিক দেউলিয়াপনার” প্রমাণ। বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জুয়াল ওরাম বলেছেন, “ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী নির্বাচন তাদের মরিয়া মনোভাব প্রকাশ করে। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হয়ে তিনি লালু যাদবের মতো ব্যক্তির সঙ্গে জোট বেঁধে কীভাবে দেশের উন্নতির কথা বলতে পারেন?”
ইন্ডিয়া জোট এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, সুদর্শন রেড্ডির প্রার্থীত্ব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবিধানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতীক। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “বিজেপি ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে প্রাক্তন বিচারপতির সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে। সুদর্শন রেড্ডি একজন সম্মানিত বিচারপতি ছিলেন, যিনি সংবিধানের মর্যাদা রক্ষায় অবদান রেখেছেন।”
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও বিজেপির সমালোচনার জবাবে বলেন, “বিজেপি তাদের প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে আমাদের প্রার্থীকে লক্ষ্য করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”এই বিতর্কের মধ্যে রাজনৈতিক মহল উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৭৮২ জন সাংসদের সমন্বয়ে গঠিত ইলেক্টোরাল কলেজ এই নির্বাচনে ভোট দেবে।
এনডিএ-র ৪৩৯ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে, যেখানে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে ৩২৪ জন সাংসদ। বিজেডি-র ৭ জন এবং বিআরএস-এর ৪ জন সাংসদের ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত এনডিএ-র পক্ষে সুবিধাজনক হতে পারে। সুদর্শন রেড্ডি, যিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন, তার প্রার্থীত্ব নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়।
চলতি মাসেই সেনা প্রধানের সঙ্গে কলকাতায় মোদী
তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষার জন্য পরিচিত। তবে, বিজেপি দাবি করছে, তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতার প্রতি প্রশ্ন তুলেছে। এই বিতর্ক উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে, এবং ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। ভোট গণনা ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শুরু হবে, এবং ফলাফল একই দিনে ঘোষণা করা হবে।