বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সিআর কেশবন সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Water Treaty) নিয়ে জওহরলাল নেহরুর সিদ্ধান্তকে ভারতীয় কৃষক ও জাতীয় স্বার্থের প্রতি ‘ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “নেহরু ১৯৬০ সালে ইন্দাস জল চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যা ছিল ভারতীয় কৃষকদের প্রতি একটি বড় বিশ্বাসঘাতকতা।
এই চুক্তি সংসদের অনুমোদন ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এমনকি নেহরুর নিজের কংগ্রেস পার্টির মধ্যেও এটি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এই চুক্তিকে ‘দ্বিতীয় বিভাজন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল, কারণ এটি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এই চুক্তি পাকিস্তানকে সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ৮০% জল দিয়েছে, আর ভারতকে মাত্র ২০% জল রেখেছে।
এছাড়া, ভারতকে বিদেশি মুদ্রার সংকটের মধ্যেও পাকিস্তানকে ৮৩ কোটি টাকা দিতে হয়েছিল। এটি ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭৪ সালে কাচাথিভু দ্বীপ হস্তান্তরের মতোই, যা ভারতীয় জেলেদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছিল এবং তাও সংসদের অনুমোদন ছাড়াই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই চুক্তি স্থগিত করেছেন, যা ভারতীয় কৃষকদের ভবিষ্যৎ ও কল্যাণ সুরক্ষিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
সিন্ধু জল চুক্তি ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি সম্পন্ন হয়, যা সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ছয়টি নদীর জল বণ্টন নিয়ে কাজ করে।
চুক্তি অনুসারে, পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী রাভি, বিপাশা এবং শতদ্রু ভারতের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়, যার মোট গড় বার্ষিক প্রবাহ ৩৩ মিলিয়ন একর-ফুট। অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদী সিন্ধু, ঝিলাম এবং চন্দ্রভাগা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়, যার মোট গড় বার্ষিক প্রবাহ ১৩৫ মিলিয়ন একর-ফুট।
এর ফলে পাকিস্তান ইন্দাস নদী ব্যবস্থার ৮০% জল পায়, আর ভারত পায় মাত্র ২০%। এছাড়া, ভারতকে পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ৮৩ কোটি টাকা দিতে হয়েছিল, যা তৎকালীন ভারতের অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষরের সময় থেকেই বিতর্কের মুখে পড়ে। সংসদে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য মাত্র দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল, এবং তাও চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাস পর। কংগ্রেস সাংসদ অশোক মেহতা এই চুক্তিকে ‘দ্বিতীয় বিভাজন’ বলে অভিহিত করেন, এবং এসি গুহা ৮৩ কোটি টাকা প্রদানকে ‘মূর্খতার চূড়ান্ত’ বলে সমালোচনা করেন।
এমনকি তৎকালীন তরুণ সাংসদ অটল বিহারী বাজপেয়ীও এই চুক্তির বিরোধিতা করে বলেছিলেন, “অন্যায়ের উপর ভিত্তি করে সত্যিকারের বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে না।” বিজেপি মুখপাত্র কেশবন এই চুক্তির সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭৪ সালে কাচাথিভু দ্বীপ শ্রীলঙ্কার কাছে হস্তান্তরের তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, উভয় ক্ষেত্রেই সংসদের অনুমোদন ছাড়াই জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যা ভারতীয় কৃষক ও জেলেদের জন্য ক্ষতিকর ছিল।
নেহরু এই চুক্তিকে ‘শান্তি ক্রয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবে। তিনি দাবি করেন, এই চুক্তি দীর্ঘ এবং তিক্ত আলোচনার পর স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু সংসদে তাঁর এই যুক্তি অনেক সাংসদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
লাগেজ ওজন করেই রেলস্টেশনে প্রবেশের অনুমতি, বিমানবন্দরের মতো নিয়ম শীঘ্রই হবে কার্যকর
তাঁরা বলেছিলেন, এই চুক্তি ভারতের কৃষকদের জন্য জলের সংকট তৈরি করবে এবং পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং জম্মু-কাশ্মীরের কৃষকরা এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নেহরু নিজেও পরে স্বীকার করেছিলেন যে, এই চুক্তি ভারতের জন্য কোনো লাভ বয়ে আনেনি।