ভারতের রাজনীতিতে আবারও চর্চায় এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লালু প্রসাদ যাদবের দ্বৈরথ। এই প্রসঙ্গে কটাক্ষ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং (Giriraj Singh)। তাঁর বক্তব্য, লালু প্রসাদ যাদব বরাবরই স্বার্থপর রাজনীতিবিদ। একই সঙ্গে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ওপরও আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “মমতা পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশে পরিণত করতে চান।”
কী বললেন গিরিরাজ সিং?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে লালু প্রসাদ যাদব ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “লালু প্রসাদ যাদব সবসময় নিজের স্বার্থের কথা ভেবেছেন। বিহারের মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উন্নয়নের, কিন্তু রাজ্যকে দুর্নীতির জালে আবদ্ধ করেছেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে গিরিরাজ সিং বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেবল একটাই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন—পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানানোর। তাঁর শাসনে বাংলার আইনশৃঙ্খলা অবনতির চরমে পৌঁছেছে।”
মমতা-লালু দ্বৈরথের সূচনা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লালু প্রসাদ যাদবের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী ঐক্যকে মজবুত করার উদ্যোগে এই মতবিরোধ বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি, জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিরোধী দলগুলোর একটি বৈঠকে মমতা ও লালুর বক্তব্যে পারস্পরিক সমালোচনা লক্ষ করা যায়। লালু প্রসাদ মমতার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস কেবল নিজেদের স্বার্থে কাজ করে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তাঁদের প্রভাব প্রায় নেই।” এর প্রতিক্রিয়ায় মমতা বলেন, “বিহারে আরজেডি সরকারের সময় যা দুর্নীতি হয়েছে, তা কারও অজানা নয়।”
বিজেপির লাভের সুযোগ
এই মতবিরোধকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছে। গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্য সেই কৌশলেরই অংশ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তিনি বলেন, “মমতা এবং লালু একসঙ্গে এলেও তাঁদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। এই দ্বৈরথ বিরোধী জোটকে আরও দুর্বল করবে।”
বিরোধীদের পাল্টা জবাব
বিজেপির এই কটাক্ষের বিরুদ্ধে তৃণমূল ও আরজেডি উভয়েই পাল্টা আক্রমণ করেছে। তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে। তাঁরা বিরোধীদের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে। গিরিরাজ সিংয়ের মন্তব্য তারই প্রমাণ।”
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, “গিরিরাজ সিংয়ের মতো নেতারা মানুষের সমস্যার সমাধান না করে শুধু অপপ্রচার চালাতেই ব্যস্ত। বিহারে আরজেডি সরকারের জনপ্রিয়তা দেখে তাঁরা হতাশ।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লালু প্রসাদ যাদবের মতবিরোধ বিরোধী ঐক্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও বিজেপি এই সুযোগকে ব্যবহার করে বিরোধী ঐক্যকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় ও জাতীয় স্তরে মমতা ও লালু দু’জনেই যথেষ্ট শক্তিশালী নেতা। তাঁদের সমর্থনে ফাটল ধরানো সহজ হবে না।
মমতা-লালুর দ্বৈরথকে ঘিরে গিরিরাজ সিংয়ের কটাক্ষ রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে তুলেছে। তবে, এই বিতর্কের পরিণতি কী হবে, তা নির্ভর করবে বিরোধী নেতাদের কৌশল এবং বিজেপির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার ওপর। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন যে এই মতবিরোধের সমাধান বা বিস্তার উভয়ের জন্যই মঞ্চ হতে চলেছে, তা স্পষ্ট।
Union Minister Giriraj Singh calls Lalu Prasad Yadav ‘selfish’ and accuses Mamata Banerjee of trying to turn West Bengal into Bangladesh. The Mamata-Lalu rift intensifies ahead of the 2024 elections.