তেলেঙ্গানায় জাতিভিত্তিক সমীক্ষায় ক্ষুব্ধ বিজেপি

তেলেঙ্গানায় (Telangana) সম্প্রতি পরিচালিত জাতিভিত্তিক সমীক্ষা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। তেলেঙ্গানা বিজেপির সভাপতি এন রামচন্দর রাও অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেস সরকার এই সমীক্ষাকে…

Telangana

তেলেঙ্গানায় (Telangana) সম্প্রতি পরিচালিত জাতিভিত্তিক সমীক্ষা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। তেলেঙ্গানা বিজেপির সভাপতি এন রামচন্দর রাও অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেস সরকার এই সমীক্ষাকে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাঁর মতে, এই জরিপের তথ্য স্বচ্ছতার অভাব এবং অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। এই সমীক্ষা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির স্বার্থের পরিবর্তে রাজনৈতিক মেরুকরণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে।

এই সমীক্ষা, যা তেলেঙ্গানা সরকারের ‘সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক সমীক্ষা’ নামে পরিচিত, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছিল। তবে, এই জরিপের ফলাফল এবং এর প্রয়োগ নিয়ে বিরোধী দলগুলি তীব্র সমালোচনা করেছে।

   

তেলেঙ্গানা সরকারের দাবি, এই জরিপের লক্ষ্য ছিল পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক প্রকল্পের জন্য একটি শক্তিশালী তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা। সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজ্যের জনসংখ্যার ৫৬.৩৩ শতাংশ বিসি সম্প্রদায়ের, যার মধ্যে ১০ শতাংশ মুসলিম বিসি অন্তর্ভুক্ত। এই তথ্যের ভিত্তিতে কংগ্রেস সরকার শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় নির্বাচনে বিসি সম্প্রদায়ের জন্য ৪২ শতাংশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তবে, রামচন্দর রাও অভিযোগ করেছেন যে, এই সমীক্ষার তথ্য সঠিক নয় এবং এটি মুসলিম সম্প্রদায়কে তোষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা বিসি সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর একটি কৌশল। তিনি আরও বলেছেন, “জনগণ ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্ত, কারণ তারা তথ্য ফাঁসের ভয় পাচ্ছেন। বিজেপি জাতিভিত্তিক সমীক্ষার বিরোধী নয়, কিন্তু এটি কী সুবিধা আনবে? এটি গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মনোযোগ বিভ্রান্ত করার এবং বিভাজন সৃষ্টির একটি কৌশল বলে মনে হচ্ছে।”

বিজেপি ছাড়াও ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) জরিপের পদ্ধতি এবং ফলাফল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। বিআরএস নেতা কে.টি. রামা রাও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কাছে একটি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন যে, জরিপে বিসি জনসংখ্যার সংখ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে কম দেখানো হয়েছে। তিনি ২০১৪ সালের সমগ্র কুটুম্ব জরিপের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, বিসি জনসংখ্যা ৫১ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অবিশ্বাস্য এবং ভুল।

বিজেপি নেতা কে. লক্ষ্মণও দাবি করেছেন যে, বিসি জনসংখ্যার হ্রাস তাদের রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর একটি ইচ্ছাকৃত কৌশল। এছাড়া, মুসলিম সম্প্রদায়কে বিসি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতারা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন, যদিও জাতীয় নেতৃত্ব পশ্মন্দা মুসলিম ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টা করছে।

Advertisements

কংগ্রেস সরকার এই অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং দাবি করেছে যে জরিপটি স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক এবং স্বচ্ছ জনসংখ্যা অধ্যয়ন। মুখ্যমন্ত্রী এ. রেভান্থ রেড্ডি এবং মন্ত্রী এন. উত্তম কুমার রেড্ডি জানিয়েছেন, এই জরিপে ৯৬.৯ শতাংশ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটি বিসি সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায্য সংরক্ষণ এবং কল্যাণমূলক নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। তারা ২০১৪ সালের বিআরএস সরকারের জরিপকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, সেই তথ্য কখনও প্রকাশিত হয়নি এবং এর কোনও আইনি ভিত্তি ছিল না।

রামচন্দর রাও-এর বক্তব্য তেলেঙ্গানার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। তিনি কংগ্রেস সরকারকে জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং বিভাজনমূলক রাজনীতির জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেস কেবল সমাজকে জাতি ও সম্প্রদায়ের নামে বিভক্ত করছে এবং নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি ভুলে গেছে।”

তিনি বিজেপিকে একটি জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা তেলেঙ্গানায় ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়াচ্ছে। বিজেপির এই অবস্থান স্থানীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে পারে, যেখানে কংগ্রেস নিজেকে বিসি সম্প্রদায়ের একমাত্র রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।

সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির জন্য ডিলিস্টিংয়ে নতুন বিধান ঘোষণা করল সেবি

জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে ৪২ শতাংশ বিসি সংরক্ষণের প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের সীমা লঙ্ঘন করে, যার জন্য সংবিধানের নবম তফসিলে এই বিলগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রামচন্দর রাও, একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে, দাবি করেছেন যে এই প্রক্রিয়া আইনি ও সাংবিধানিকভাবে অসম্ভব। তিনি বলেছেন, কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ কেবল রাজনৈতিক সুবিধার জন্য, এবং এটি বিসি সম্প্রদায়ের প্রতি প্রকৃত সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবে।