দীর্ঘ দু বছর পর রাজধানীতে পুরসভার ক্ষমতায় বিজেপি

দিল্লির মিউনিসিপাল কর্পোরেশন অফ দিল্লি (MCD)-তে দুই বছর পর ক্ষমতায় ফিরেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (bjp)। শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, বিজেপি নেতা রাজা ইকবাল সিং দিল্লির…

bjp elected new mayor

দিল্লির মিউনিসিপাল কর্পোরেশন অফ দিল্লি (MCD)-তে দুই বছর পর ক্ষমতায় ফিরেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (bjp)। শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, বিজেপি নেতা রাজা ইকবাল সিং দিল্লির নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কংগ্রেস প্রার্থী মানদীপ সিংকে পরাজিত করে এই শীর্ষ নাগরিক পদ অধিকার করেছেন। আম আদমি পার্টি (AAP) এই মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল।

   

রাজা ইকবাল সিং যখন তার আসনে বসেন, তখন বিজেপি কাউন্সিলররা ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানে পরিবেশ মুখরিত করে তোলেন। এই জয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপি দিল্লির নাগরিক প্রশাসনে তাদের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।

নির্বাচনের ফলাফল ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (bjp)

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, রাজা ইকবাল সিং মোট ১৪২টি ভোটের মধ্যে ১৩৩টি ভোট পেয়েছেন, যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী মানদীপ সিং মাত্র ৮টি ভোট পেয়েছেন। একটি ভোট অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আপ এর নির্বাচন বর্জন এবং কংগ্রেসের সীমিত উপস্থিতির কারণে বিজেপির জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। এমসিডি-তে বর্তমানে মোট ২৩৮টি আসন রয়েছে, কারণ ১২টি আসন কাউন্সিলরদের দিল্লি বিধানসভা বা লোকসভায়

নির্বাচিত হওয়ার কারণে শূন্য রয়েছে। বিজেপির (bjp) কাউন্সিলর সংখ্যা ২০২২ সালের ১০৪ থেকে বেড়ে ১১৭-এ পৌঁছেছে, যেখানে আপ -এর সংখ্যা ১৩৪ থেকে কমে ১১৩-এ নেমেছে। কংগ্রেসের মাত্র ৮টি আসন রয়েছে। নির্বাচনে ভোটাধিকার রয়েছে ২৩৮ জন কাউন্সিলর, ১০ জন সাংসদ (লোকসভা থেকে ৭ এবং রাজ্যসভা থেকে ৩) এবং ১৪ জন বিধায়কের, যাদের মধ্যে ১১ জন বিজেপি এবং ৩ জন এএপি থেকে মনোনীত।

রাজা ইকবাল সিং: পটভূমি ও রাজনৈতিক যাত্রা

রাজা ইকবাল সিং বিজেপিতে (bjp) তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও তার রাজনৈতিক উত্থান উল্লেখযোগ্য। তিনি দীর্ঘদিন শিরোমণি আকালি দলের (এসএডি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং জিটিবি নগর থেকে কাউন্সিলর ছিলেন। ২০২০ সালে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় এসএডি জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) থেকে বেরিয়ে গেলে, দলের নেতৃত্ব তাকে সিভিল লাইনস জোনের চেয়ারপারসন পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলে।

তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরবর্তীতে বিজেপিতে (bjp) যোগ দেন। ২০২১ সালে বিজেপি তাকে উত্তর দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের মেয়র পদে নিয়োগ করে। তিনি বর্তমানে এমসিডি-তে বিরোধী দলনেতা এবং পূর্বে মুখার্জি নগর ওয়ার্ড ১৩-এর কাউন্সিলর এবং সিভিল লাইন জোনের ওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

জাহাঙ্গীরপুরী ধ্বংসযজ্ঞে ভূমিকা

ইকবাল সিং ২০২২ সালে জাহাঙ্গীরপুরীতে বিতর্কিত ধ্বংসযজ্ঞের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আলোচনায় আসেন। ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তী শোভাযাত্রার সময় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ২০ জনেরও বেশি গ্রেফতার হয়। বিজেপি (bjp) উত্তর দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনকে ‘দাঙ্গাকারীদের অবৈধ নির্মাণ’ ভাঙার নির্দেশ দেয়। ইকবাল সিং-এর নেতৃত্বে এই ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়, যা ধর্মীয় কোণ থেকে না দেখে ‘অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে তিনি দাবি করেন। এই ঘটনা তাকে বিজেপির মধ্যে একজন দৃঢ়চিত্ত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

এই ভারতীয় ফরোয়ার্ডকে দলে টানার পথে কেরালা

পহেলগাঁও হামলার প্রতি শ্রদ্ধা

নির্বাচনের শুরুতে এমসিডি সভায় পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় নিহত ২৬ জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এই ঘটনার শোক প্রকাশে নির্বাচনী উৎসবের সজ্জা সরিয়ে ফেলা হয়। এই হামলার জন্য দায়ী লস্কর-ই-তৈবার শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এবং এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন জঙ্গি আদিল হুসেন থোকার ও আসিফ শেখের বাড়ি বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছে।

ইকবাল সিং-এর প্রতিশ্রুতি

মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর রাজা ইকবাল সিং (bjp) দিল্লির স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা, আবর্জনার স্তূপ দূর করা, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান এবং নাগরিকদের মৌলিক সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দিল্লির জনগণ আমাদের উপর ভরসা করেছে। আমরা দুর্নীতি দূর করব এবং গত দুই বছরে বন্ধ থাকা উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করব।” তিনি বিজেপির ‘ট্রিপল ইঞ্জিন সরকার’ (কেন্দ্র, রাজ্য এবং এমসিডি) দিল্লির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আপ-এর বর্জন ও সমালোচনা

আপ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক উপায়ে’ ক্ষমতা দখলের অভিযোগ তুলেছে। আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, “বিজেপি দলত্যাগ ঘটিয়ে এবং অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এমসিডি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা এখন কোনো অজুহাত ছাড়াই দিল্লি শাসন করুক।” আপ -এর দাবি, ২০২২ সালের এমসিডি নির্বাচনে তারা জয়ী হলেও বিজেপি নানা কৌশলে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমিয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ

ইকবাল সিং-এর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দিল্লির চিরাচরিত সমস্যা—জলাবদ্ধতা, স্যানিটেশন এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনা। তিনি দ্রুত স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিজেপির ট্রিপল ইঞ্জিন সরকারের দাবি এখন জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পরীক্ষার মুখে।