হায়দ্রাবাদের পাকিস্তানিদের ফেরানোর দাবিতে চারমিনারে বিজেপির বিক্ষোভ

আজ হায়দরাবাদের চারমিনারে ভারতীয় জনতা পার্টি (bjp) নেতারা একটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন , যেখানে তারা হায়দরাবাদে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন।…

bjp potest in charminar

আজ হায়দরাবাদের চারমিনারে ভারতীয় জনতা পার্টি (bjp) নেতারা একটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন , যেখানে তারা হায়দরাবাদে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন।

বিজেপি (bjp) নেতা টি উমা মহেন্দ্র তেলঙ্গানা সরকার এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, পাকিস্তানি নাগরিকদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। এই বিক্ষোভ পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যে হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন।

   

বিজেপি নেতার বক্তব্য (bjp) 

সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বিজেপি (bjp) নেতা টি উমা মহেন্দ্র বলেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি হামলা ঘটছে, কিন্তু হামলাকারীদের হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর মানে হলো, এই শহর তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

আমি দাবি করছি, তেলঙ্গানা সরকার এবং আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ঘরে ঘরে গিয়ে পাকিস্তানি নাগরিকদের চিহ্নিত করুন এবং তাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠান।” তিনি আরও বলেন, হায়দরাবাদকে জঙ্গিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া যায় না।

অজিঙ্ক্য রাহানের টস জয়, রাজস্থানের বিরুদ্ধে ব্যাটিংয়ে কেকেআর

পহেলগাঁও হামলা ও ভারতের পদক্ষেপ

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও র বাইসারান উপত্যকায় পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের উপর হামলা চালায়। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন। সন্ত্রাসীরা অমুসলিম পর্যটকদের আলাদা করে ইসলামিক বিশ্বাসের ঘোষণা কালিমা পড়তে বলে এবং অস্বীকার করায় তাদের কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এই হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার অভিযোগ তুলে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ২৩ এপ্রিল মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির (সিসিএস) বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এই সিদ্ধান্তগুলো ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ভারত ১৯৬০ সালের ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করেছে এবং আটারি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) বন্ধ করে দিয়েছে।

এছাড়াও, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা ছাড় স্কিম (এসভিইএস) বাতিল করা হয়েছে। অতীতে জারি করা এসভিইএস ভিসাগুলো বাতিল বলে গণ্য করা হবে, এবং ভারতে অবস্থানরত যেকোনো পাকিস্তানি নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মিশ্রি আরও বলেন, উভয় দেশের হাই কমিশনের মোট কর্মকর্তার সংখ্যা বর্তমান ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে, যা ২০২৫ সালের ১ মে-র মধ্যে কার্যকর হবে। সিসিএস সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সব বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের জবাবদিহি করতে হবে।

হায়দরাবাদের প্রেক্ষাপট

বিজেপি (bjp) নেতাদের বিক্ষোভ হায়দরাবাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য। হায়দরাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির রাজনৈতিক গড় হিসেবে পরিচিত। বিজেপি নেতা উমা মহেন্দ্রের দাবি, হায়দরাবাদ সন্ত্রাসীদের জন্য একটি “নিরাপদ আশ্রয়স্থল” হয়ে উঠেছে, যা শহরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তিনি তেলঙ্গানা সরকার এবং ওয়াইসির প্রতি পাকিস্তানি নাগরিকদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়েছেন, যা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তেলঙ্গানা সরকার এখনও এই দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, হায়দরাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে এবং শহরে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করার জন্য নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। তবে চীন, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে, একটি “নিরপেক্ষ তদন্ত” এর আহ্বান জানিয়েছে, যা ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে। রাশিয়া ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান ভারতের পদক্ষেপগুলোকে “যুদ্ধের কাজ” হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা শিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে এবং ভারতীয় ফ্লাইটের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

হায়দরাবাদে বিজেপি’র (bjp) বিক্ষোভ পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরেছে। ভারতের কঠোর কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপ, যেমন ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা, পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

তবে, হায়দরাবাদে পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর দাবি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা তেলঙ্গানার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম এবং সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।