কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর: সাইবার অপরাধের নতুন নতুন কৌশলের শিকার হয়ে চিক্কাবল্লাপুর বিজেপি সাংসদ এবং সাবেক কর্ণাটক মন্ত্রী ড. কে. সুধাকরের স্ত্রী ড. প্রীতি সুধাকরের কাছে ১৪ লক্ষ টাকা হাতছাড়া হয়েছে। মুম্বাই সাইবার ক্রাইম বিভাগের নাম ধরে প্রতারকরা ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ নামক একটি ভুয়া কৌশলে তাঁকে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
কিন্তু বেঙ্গালুরু পুলিশের দ্রুত সাড়া এবং ‘গোল্ডেন আওয়ার’-এর মধ্যে অভিযোগ দায়েরের ফলে পুরো ১৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনা সাইবার ফ্রডের ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং পুলিশের দক্ষতার উদাহরণ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। ঘটনাটি ঘটে ২৬ আগস্ট। ৪৪ বছর বয়সী ড. প্রীতি, যিনি বেঙ্গালুরুর বাসবেশ্বরনগরের বাসিন্দা, হঠাৎ ওয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও কল পান।
কল যিনি করেন তিনি নিজেকে মুম্বই সাইবার ক্রাইম পুলিশের অফিসার বলে পরিচয় দেন এবং দাবি করেন যে, তাঁর ব্যক্তিগত ডকুমেন্টস (যেমন আধার কার্ড) এক সাদভাত খান নামক ব্যক্তি দিয়ে অপব্যবহার করা হয়েছে। সেই ব্যক্তি তাঁর নামে ক্রেডিট কার্ড তৈরি করে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং লাওসের মতো দেশে মানুষ পাচারের মতো অবৈধ কাজে ব্যবহার করেছে।
প্রমাণ হিসেবে প্রতারকরা খানের ‘গ্রেফতারের ছবি’ পাঠান এবং ভিডিও কলে ভয় দেখান যে, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হবে এবং অ্যারেস্ট করা হবে। ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর হুমকিতে প্রীতি ভয় পেয়ে তাঁর এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আরটিজিএসের মাধ্যমে ১৪ লক্ষ টাকা একটি অজানা ইয়েস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। প্রতারকরা আশ্বাস দেন যে, ৪৫ মিনিটের মধ্যে ভেরিফিকেশনের পর টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই প্রীতি বুঝতে পারেন যে, এটি একটি ফাঁদ। তিনি সেই সন্ধ্যাতেই বেঙ্গালুরু ওয়েস্ট ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম, ইকোনমিক অফেন্সেস অ্যান্ড নারকটিক্স (সিইএন) পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ দ্রুত এফআইআর রেজিস্টার করে এবং ‘গোল্ডেন আওয়ার’-এর মধ্যে ট্রানজ্যাকশনের ডিটেইলস ট্র্যাক করে প্রতারকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে।
এক সপ্তাহের মধ্যেই আদালতের নির্দেশে পুরো টাকা উদ্ধার করে ভিকটিমের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, এই দ্রুত অ্যাকশনের কারণেই টাকা ফেরত আসতে পারে, কারণ সাইবার ফ্রডে সাধারণত অর্থের অনেকটা অংশ হারিয়ে যায়। তদন্ত চলছে প্রতারক নেটওয়ার্ককে ধরার জন্য, কিন্তু এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
ড. কে. সুধাকর, যিনি চিক্কাবল্লাপুরের সাংসদ এবং কর্ণাটকের সাবেক মেডিক্যাল এডুকেশন মন্ত্রী, এই ঘটনায় কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ড. প্রীতি, যিনি একজন চিকিৎসক, এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, “আমি ভাবতেও পারিনি যে, এমনভাবে আমাকে ঠকানো যাবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছি।” এই ঘটনা সাইবার ক্রাইমের বাড়তি হুমকির সতর্কবার্তা।
নবরাত্রিতে জিএসটি হারের হ্রাসে এসি-টিভি বিক্রি বাড়ল
ভারতে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ স্ক্যামের কেসগুলি ক্রমশ বাড়ছে, যেখানে প্রতারকরা পুলিশের ছদ্মবেশে ভিডিও কল করে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতায়। গত এক বছরে এমন হাজারো কেস রিপোর্ট হয়েছে, যাতে লক্ষ লক্ষ টাকা হারিয়ে গেছে। পুলিশের সিইএন ডিপার্টমেন্টের ডিসি গিরিশ বলেছেন, “যদি এমন কোনো কল আসে, তাহলে প্যানিক করবেন না। জাতীয় সাইবার হেল্পলাইন ১৯৩০-এ কল করুন এবং নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করুন। মনে রাখবেন, ভারতীয় আইনে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বলে কিছু নেই—এটি সম্পূর্ণ ভুয়া। পুলিশ কখনো অনলাইনে মামলা শুরু করে টাকা চায় না।”

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
