ট্রাম্পের ঘোষণা ঘিরে বিস্ফোরক বিজেপি সাংসদ, পাকিস্তানকে ‘ভিখারী’ বলে তীব্র কটাক্ষ

ভারত ও আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে। পাকিস্তানের সঙ্গে তেলচুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা এবং ভারতের…

Nishikant Dubey

ভারত ও আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে। পাকিস্তানের সঙ্গে তেলচুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা এবং ভারতের প্রতি তার শুল্ক আরোপের হুমকির জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।

পাকিস্তানকে ‘ভিখারী দেশ’ বলে কটাক্ষ:
ট্রাম্পের বক্তব্যের পাল্টা দিয়ে নিশিকান্ত দুবে শুক্রবার এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ পোস্ট করেন, “একটি ভিখারী দেশ ভারতের কী দেবে?” তিনি আরও বলেন, “আমেরিকার নিজের রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তানের মোট তেল ও গ্যাসের ২৫ শতাংশই তার নিজের চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত নয়। পাকিস্তানের একমাত্র ভরসা তুর্কমেনিস্তান, ইরান ও কাতার থেকে আসা তেল ও গ্যাস পাইপলাইন। তাহলে সেই দেশ ভারতের কী দেবে?”

   

নিশিকান্ত দুবে তার পোস্টে উইকিলিকসের একটি উদ্ধৃতি শেয়ার করেন, যেখানে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানের নিজের প্রাকৃতিক সম্পদ খুবই সীমিত এবং তা দিয়ে তার নিজস্ব চাহিদা মেটানোও সম্ভব নয়।

“মোদি জমানায় শক্তিশালী ভারত”:

গোদ্দা লোকসভা কেন্দ্রের এই সাংসদ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ভারত তার কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে তোয়াক্কা করে না। এই হল মোদির নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী ভারত।”

ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য:
গত বুধবার (স্থানীয় সময়) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, আমেরিকা ও পাকিস্তান যৌথভাবে পাকিস্তানের “বৃহৎ তেল ভাণ্ডার” উন্নয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে এবং একটি শীর্ষস্থানীয় তেল কোম্পানিকে এই প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ট্রাম্পের মন্তব্য, “হয়তো একদিন পাকিস্তান ভারতকে তেল বিক্রি করবে!”

এই মন্তব্য ঘিরেই তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে, কারণ পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।

ভারতের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ:
এর পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, ভারতের থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্পের অভিযোগ, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে, যার জেরেই এই সিদ্ধান্ত।

Advertisements

তবে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, সেটি আপাতত সাত দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ তা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এর মধ্যে ইউএস কাস্টমস তাদের সিস্টেম আপডেট করবে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং কূটনৈতিক অবস্থান:
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত ট্রাম্পের মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও নিশিকান্ত দুবের মন্তব্যে বিজেপির অভ্যন্তরীণ মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে। ভারত বেশ কয়েক বছর ধরেই জ্বালানি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা অর্জনের দিকে এগোচ্ছে। সেই সঙ্গে সৌদি আরব, রাশিয়া, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে শক্তিশালী জ্বালানি চুক্তিও রয়েছে ভারতের।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারত আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে, এটি দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে এবং জ্বালানির বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় জরুরি। ভারত এই ক্ষেত্রে কোনও তৃতীয় পক্ষের চাপ মানবে না।

বিশ্লেষকদের মতামত:
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্য মূলত মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উদ্দেশ্যে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে পাকিস্তানের মুসলিম ভোট ব্যাংককে খুশি করার কৌশল। ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের ওপর এই মন্তব্যের ততটা প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে ভারতের বাজারে আমেরিকার শুল্ক আরোপের হুমকি কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

ট্রাম্পের পাকিস্তানকে ঘিরে তেলচুক্তির ঘোষণা এবং ভারতের ওপর বাণিজ্যিক চাপ তৈরি করার প্রচেষ্টা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে নিশিকান্ত দুবের মতো নেতাদের পাল্টা কড়া বার্তায় স্পষ্ট যে, ভারত এখন আর নত মাথায় কূটনীতি করে না। দেশের স্বার্থে দৃঢ় অবস্থান নেওয়াই এখন সরকারের মূলনীতি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নজর থাকবে ৭ আগস্টে, যেদিন থেকে নতুন শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হতে চলেছে। তার আগে দুই দেশের মধ্যে কোনও উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয় কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।