কেদারনাথ মন্দিরে “অ-হিন্দুদের” প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দাবি বিজেপি বিধায়কের

উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক আশা নৌটিয়াল কেদারনাথ মন্দিরে (Kedarnath temple) “অ-হিন্দুদের” প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। রবিবার তিনি সংবাদ সংস্থা…

BJP MLA Asha Nautiyal

short-samachar

উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক আশা নৌটিয়াল কেদারনাথ মন্দিরে (Kedarnath temple) “অ-হিন্দুদের” প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। রবিবার তিনি সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সম্প্রতি কেদারনাথে যাত্রা ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল, যেখানে স্থানীয়রা কিছু সমস্যার কথা উত্থাপন করেছিলেন। এই সমস্যাগুলি এতদিন নজরে আসেনি বলে তিনি দাবি করেন।

   

আশা নৌটিয়াল জানান, তিনি স্থানীয়দের উত্থাপিত বিষয়গুলির সঙ্গে একমত এবং মনে করেন যে কিছু ব্যক্তি কেদারনাথ ধামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, “সম্প্রতি কেদারনাথে যাত্রা ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে কিছু লোক এমন কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন, যা নজরে আসেনি। আমিও মনে করি, যদি কেউ কেদারনাথ ধামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে, তবে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত।” তিনি এই দাবির সমর্থনে আরও যোগ করেন যে, এই ধরনের কার্যকলাপে জড়িত ব্যক্তিরা “নিশ্চিতভাবে অ-হিন্দু” এবং তারা মন্দিরের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এসব করছে।

নৌটিয়ালের দাবি, “এরা নিশ্চিতভাবে অ-হিন্দু, যারা এখানে এসে এমন কাজে জড়িয়ে পড়ে যা ধামকে অপমান করে। আমাদের এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে, কারণ এমন একটি সমস্যা উত্থাপিত হয়েছে মানে এর পিছনে কিছু সত্যতা থাকতেই পারে। আমরা দাবি করব যে এই ধরনের লোকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হোক।” তবে, তিনি এই অভিযোগের পক্ষে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। তার এই বক্তব্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রতিধ্বনি বলে মনে করা হচ্ছে, যারা দাবি করেছেন যে কেদারনাথে মাংস, মৎস্য এবং মদের মতো নিষিদ্ধ কার্যকলাপ চলছে।

এই বক্তব্যের পর থেকে রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপির মিডিয়া প্রভারী মনবীর সিং চৌহান নৌটিয়ালের এই দাবির সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, “এটি হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগের বিষয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন যে কেদারনাথে মদ এবং মাংস বিক্রি হচ্ছে, যা এই পবিত্র স্থানে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা ও উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত নৌটিয়ালের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি নেতাদের সংবেদনশীল মন্তব্য করার অভ্যাস রয়েছে। উত্তরাখণ্ড একটি দেবভূমি, কিন্তু কতদিন ধরে আপনারা সবকিছু ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলবেন? তারা এটা করছে কারণ জনগণের কাছে বলার মতো আর কিছু নেই।” রাওয়াতের এই মন্তব্যে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সম্প্রতি কেদারনাথ এবং হেমকুন্ড সাহিবে দুটি রোপওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পগুলি উত্তরাখণ্ডের পর্যটন অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে। কেদারনাথের জন্য ১২.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোপওয়ে সোনপ্রয়াগ থেকে কেদারনাথ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এটি ডিজাইন, বিল্ড, ফিনান্স, অপারেট এবং ট্রান্সফার (ডিবিএফওটি) মডেলে তৈরি হবে এবং এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪,০৮১.২৮ কোটি টাকা।

এই রোপওয়ে প্রকল্পে অত্যাধুনিক ট্রাই-কেবল ডিটাচেবল গন্ডোলা (৩এস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এর নকশা প্রতি ঘণ্টায় প্রতি দিকে ১,৮০০ জন যাত্রী এবং দিনে ১৮,০০০ জন পর্যটক বহন করতে সক্ষম হবে। এই প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে তৈরি হবে, যা তীর্থযাত্রীদের জন্য দ্রুত এবং সুবিধাজনক অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে চারধাম যাত্রা শুরু হবে। এই দিন গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রী ধামের দ্বার উন্মুক্ত হবে। কেদারনাথ ধামের দ্বার ২ মে এবং বদ্রীনাথ ধাম ৪ মে খুলবে। নৌটিয়ালের এই দাবি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যাত্রার প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে।

নৌটিয়ালের এই বক্তব্যকে কিছু হিন্দু ধর্মীয় নেতা সমর্থন করলেও, অনেকে এটিকে বিভাজনকারী হিসেবে দেখছেন। ভারতের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়, তবে মন্দির ট্রাস্টগুলি প্রায়শই তাদের নিজস্ব নীতি প্রয়োগ করে। স্থানীয় সমর্থকরা বলছেন, এটি কেদারনাথের পবিত্রতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে, বিরোধীরা এটিকে ধর্মীয় সৌহার্দ্যের উপর আঘাত বলে মনে করছেন।

আশা নৌটিয়ালের এই দাবি কেদারনাথ ধামকে ঘিরে একটি নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। এটি শুধু ধর্মীয় বিষয় নয়, রাজনৈতিক এবং সামাজিক মাত্রাও গ্রহণ করেছে। আগামী দিনে এই বিষয়ে সরকার এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার বিষয়। তবে, এই ঘটনা উত্তরাখণ্ডের তীর্থযাত্রার প্রস্তুতির মধ্যে একটি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।