কেরালার এরাটুপেট্টা জুডিশিয়াল ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বিজেপি নেতা পি সি জর্জকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। আদালত তাঁর স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা বিবেচনা করে কট্টায়াম মেডিকেল কলেজে চেক-আপের জন্য তাকে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর আগে, পি সি জর্জ ‘হেট্ স্পিচ’ মামলায় এরাটুপেট্টা কোর্টে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কেরালা হাইকোর্ট তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করার পর এ ঘটনাটি ঘটলো।
এদিকে, পি সি জর্জ জানুয়ারি মাসে একটি টেলিভিশন আলোচনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, যার ফলে মুসলিম যুব লীগ নেতা একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, “আমি এরাটুপেট্টায় বসে বলছি, এখানে ৪০,০০০ মানুষের মধ্যে ৩৮,৬০০ মুসলিম। আপনারা পৃথিবীর কোথাও এমন অসচেতন সম্প্রদায় দেখবেন না। আপনাদের কি বিবেক নেই? অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আপনার কি মধুর দৃষ্টিভঙ্গি আছে? আমাদের যে বৈচিত্র্য দেখানো হয়, সেটি কি আপনি জানেন? আমরা কি বলছি, সব মুসলিমকে মেরে ফেলতে হবে? যদি আপনি মুসলিম হন, তাহলে আপনি কমিউনাল। এরকম হয়ে গেছে। আপনি ভারত চান না, পাকিস্তান চান। পাকিস্তানে চলে যান।”
এ মন্তব্যের পর এরাটুপেট্টা পুলিশ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং কেরালা পুলিশ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করে। পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি বাড়িতে ছিলেন না। আগেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছিল এবং তিনি আদালতে হাজির হতে দু’দিন সময় চেয়েছিলেন। এর আগে আদালত পুলিশি হেফাজতে ৬ ঘণ্টার জন্য পি সি জর্জকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু পুলিশের আবেদনপত্রে কিছু ত্রুটি থাকার কারণে আদালত পুলিশকে আবেদনটি সংশোধন করতে এবং পুনরায় জমা দিতে নির্দেশ দেয়।
এছাড়াও, পি সি জর্জ তাঁর মন্তব্যের জন্য ফেসবুক পোস্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি লিখেছিলেন, “আমি শর্তহীনভাবে আমার মন্তব্য প্রত্যাহার করছি যে, ভারতীয় সব মুসলিমই সন্ত্রাসী, এবং আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাই যারা এই দেশকে ভালোবাসেন এবং যারা আঘাত পেয়েছেন। তবে আমি স্পষ্ট জানি যে, তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা দেশবিরোধী চরমপন্থী চিন্তা ধারণ করে। আমি তাদের এবং তাদের সমস্ত সহযোগীদের বিরুদ্ধে সবসময় শক্তিশালীভাবে বিরোধিতা করব।” এদিকে, পি সি জর্জের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যের পর কেরালায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একাধিক প্রতিবাদ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ এবং প্রশাসন এখন পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
পি সি জর্জের বিরুদ্ধে হেট্ স্পিচ মামলার এই ঘটনা কেরালায় নতুন একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, তাকে ১৪ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া, তার ক্ষমা প্রার্থনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।