বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Elections) আবহে বিহারের রাজধানী পাটনায় একটি হৃদয়বিদারক ঘটনায় বিজেপি নেতা ও ব্যবসায়ী গোপাল খেমকার বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গতকাল রাতে গান্ধী ময়দানের কাছে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে, যা রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এই ঘটনার সঙ্গে সংযুক্ত একটি আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো, গোপাল খেমকার পুত্র গুঞ্জন খেমকাও ২০১৮ সালে হাজীপুরে তাদের কারখানায় হত্যা হয়েছিল। এই দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ড রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং বিজেপি কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার বিবরণ
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গোপাল খেমকা গতকাল রাতে তাঁর বাড়ি ফিরছিলেন, তখন অতর্কিতে অজ্ঞাতনামা আসামিদের হাতে গুলি লাগে। স্থানীয় সূত্রের কথা মতে, ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি প্রাথমিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, তবে এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পাটনা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, তদন্ত কঠোরভাবে চলছে এবং দ্রুতই অপরাধীদের ধরা হবে। তবে, স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না, কারণ ২০১৮ সালের হত্যাকাণ্ডের পর গুঞ্জন খেমকার হত্যাকারীদের ধরা পড়েনি।
পারিবারিক দুঃখ ও প্রতিক্রিয়া
গোপাল খেমকার ভাই শঙ্কর খেমকা এই ঘটনার পর একটি বক্তব্যে জানিয়েছেন, “আমরা কোনো হুমকি বা বিরোধের কথা জানতাম না। এই হত্যাকাণ্ড আমাদের পক্ষে অত্যন্ত আকস্মিক।” তিনি পুলিশের উপর নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপি নেতা রাম কৃষ্ণ যাদব এই ঘটনাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে নিয়ে বলেছেন, “যদি ২০১৮ সালে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিত, তবে আজ গোপাল খেমকা বেঁচে থাকতেন। বিহার এখন অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।”
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। টুইটারে ব্যবহারকারীরা “জঙ্গল রাজ” শব্দটি ব্যবহার করে নিতীশ কুমারের সরকারের উপর আক্রমণ শুরু করেছেন। অনেকে মনে করছেন যে, আসন্ন নির্বাচনের আগে এই ধরনের অপরাধী ঘটনা রাজনৈতিক সংঘাতের পরিচয় দিতে পারে।
বিহারের অপরাধ পরিস্থিতি: একটি উদ্বেগজনক চিত্র
বিহার দীর্ঘদিন ধরে “জঙ্গল রাজ” নামে পরিচিত, এবং গোপাল খেমকার হত্যা এই ধারণাকে পুনরায় জোরদার করেছে। ২০২৩ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, পাটনায় মাত্র ৩০ দিনে ৩০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যা রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিহারে প্রতি লক্ষ মানুষের উপর অপরাধের হার ছিল ৪৮৭.৮, যা পরবর্তী বছরগুলোতে কিছুটা হলেও কমেছে, তবে এখনো উদ্বেগজনক।
স্থানীয় নাগরিকরা জানাচ্ছেন যে, রাতের বেলা রাস্তায় বের হওয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অপরাধীদের উপর পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত এবং ভোটের রাজনীতি এই অপরাধের হার বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ
বিজেপি এই ঘটনাকে নিয়ে নিতীশ কুমারের জেডিইউ সরকারের উপর আঙুল তুলেছে। তাদের দাবি, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য এই সরকার দায়ী। অন্যদিকে, জেডিইউ নেতারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছেন যে, পুলিশ তদন্তে ব্যস্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে। তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা কমে গেছে।
আসন্ন নির্বাচনের পটভূমিতে এই ঘটনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। বিজেপি এই ঘটনাকে তাদের প্রচারে ব্যবহার করতে পারে, যেখানে তারা নিরাপত্তা বিষয়ে নিতীশ কুমারের ব্যর্থতা তুলে ধরবে। অন্যদিকে, জেডিইউ এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার চেষ্টা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে।
গোপাল খেমকার হত্যা শুধু একটি পারিবারিক দুঃখ নয়, বরং বিহারের সমগ্র সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। রাজ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে পারে। সরকারের উপর এখন জনগণের চাপ বাড়ছে যে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়া হোক। এই ঘটনার পর বিহারের রাজনীতি ও সমাজের কী দিকে যাওয়া যায়, তা সময়ের গতিতে নির্ভর করবে।