ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভাষা (School Education) নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিরোধ এবং উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার একটি পথপ্রদর্শক উদ্যোগ ঘোষণা করেছে। মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকের মতো রাজ্যে ভাষাগত বিরোধ এবং সাংস্কৃতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে, মধ্যপ্রদেশ সরকার তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভারতীয় ভাষার উপর বিশেষ কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা, যাতে ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে বিভেদ কমিয়ে জাতীয় ঐক্য জোরদার করা যায়।মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ঘোষণা করেছেন যে, রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ভারতীয় ভাষার উপর বিশেষ কোর্স চালু করা হবে।
এই কোর্সগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলুগু, মারাঠি, গুজরাটি, মালয়ালম, কন্নড়, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, অসমিয়া সহ ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার ইতিহাস, সাহিত্য, এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এছাড়াও, সংস্কৃত এবং অন্যান্য প্রাচীন ভাষার উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হবে, যা ভারতীয় সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই উদ্যোগের পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভাষাগত বৈচিত্র্যকে একটি বিভাজক শক্তি হিসেবে নয়, বরং জাতীয় ঐক্যের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। মুখ্যমন্ত্রী চৌহান বলেছেন, “ভারতের শক্তি তার বৈচিত্র্যের মধ্যে নিহিত। ভাষা আমাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু এটি বিভেদের কারণ হওয়া উচিত নয়।
আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন ভাষা এবং তাদের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষিত করার মাধ্যমে আমরা একটি সমন্বিত ও সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তুলতে পারি।” মধ্যপ্রদেশ সরকারের এই পদক্ষেপ মহারাষ্ট্রে মারাঠি ভাষা নিয়ে চলমান বিতর্ক এবং কর্নাটকে কন্নড় ভাষার প্রাধান্য নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
এই রাজ্যগুলিতে ভাষা নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিরোধ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যা জাতীয় ঐক্যের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যপ্রদেশের এই উদ্যোগ অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে বলে শিক্ষাবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এই কোর্সগুলির পাঠ্যক্রমে ভাষার ব্যাকরণ, সাহিত্য, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছাড়াও ভাষাগত সমন্বয় এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগের উপর জোর দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য এই কোর্সগুলি ঐচ্ছিক হলেও, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপ এবং সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু করবে।
এছাড়া, ভাষা শিক্ষার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন কোর্সও প্রবর্তন করা হবে, যাতে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী এই উদ্যোগের সুবিধা নিতে পারে। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী মোহন যাদব জানিয়েছেন, এই কোর্সগুলি তরুণদের মধ্যে ভাষাগত সহিষ্ণুতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাষা শিখে এবং তাদের সাংস্কৃতিক পটভূমি বুঝে একটি সমন্বিত সমাজ গঠনে অবদান রাখুক।”
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, রাজ্য সরকার ভাষা বিশেষজ্ঞ, সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সহযোগিতায় কাজ করবে। এছাড়াও, ভারতের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির উপর সেমিনার, কর্মশালা এবং সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই উদ্যোগকে শিক্ষাবিদ এবং সামাজিক কর্মীরা স্বাগত জানিয়েছেন। তবে, কিছু সমালোচক মনে করছেন, এই প্রকল্পের সফলতা নির্ভর করবে এর বাস্তবায়নের উপর।
ISL ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ অংশীদার নির্বাচনের আর্জি ক্লাব গুলির
পাঠ্যক্রমের গুণগত মান, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে, মধ্যপ্রদেশ সরকার এই উদ্যোগকে সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রকল্প ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্যকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।