মেরুকরণের রাজনীতি করতে গিয়ে শীর্ষ আদালতের কোপে বিজেপি

বেঙ্গালুরু, ১৯ সেপ্টেম্বর: বেশ কয়েক দিন যাবৎ শীর্ষ আদালতে (Supreme Court) বিজেপি বনাম কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের মধ্যে চলছিল লড়াই। যুযুধান দুই পক্ষই তর্ক বিতর্কের মধ্যে…

Supreme Court rejected BJP allegation

বেঙ্গালুরু, ১৯ সেপ্টেম্বর: বেশ কয়েক দিন যাবৎ শীর্ষ আদালতে (Supreme Court) বিজেপি বনাম কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের মধ্যে চলছিল লড়াই। যুযুধান দুই পক্ষই তর্ক বিতর্কের মধ্যে দিয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করছিলেন। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হলেন বুকার পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক বানু মুস্তাক। কর্ণাটক সরকার তাকে মহীশূর দশেরা উৎসবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সেই থেকেই ঝাল লাগা শুরু হয় বিজেপি এবং অন্যান্য তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে তারা পিটিশন জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে । কিন্তু আজ সুপ্রিম কোর্ট বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদীদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছে মহিষূর দশেরা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং রাজ্যের জাতীয় উৎসব নাড়া হাব্বাতেও সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারে। এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট কর্ণাটক হাইকোর্টের ১৫ সেপ্টেম্বরের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।

   

বিতর্কের সূচনা হয়েছে গত মাসে। কর্ণাটক সরকার দশেরা উদ্বোধনের জন্য বানু মুস্তাককে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। বানু মুস্তাক একজন নামকরা কন্নড় লেখিকা যিনি তার কন্নড়া ছোটগল্প সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’-এর ইংরেজি অনুবাদের জন্য ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার জিতেছেন। তিনি প্রথম কন্নড়া লেখিকা হিসেবে এই সম্মান লাভ করেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি ২২ সেপ্টেম্বর চামুণ্ডেশ্বরী মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রদীপ প্রজ্বলন, ফুল-ফল অর্পণ এবং বেদ পাঠের মতো রীতি রীতি অন্তর্ভুক্ত। বিজেপি নেতা এবং হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি এই আমন্ত্রণের তীব্র বিরোধিতা করে, দাবি করে যে মুস্তাক একজন মুসলিম হওয়ায় এবং ২০২৩ সালের একটি সাহিত্য সম্মেলনে ‘ভূবনেশ্বরী দেবী’-কে কন্নড়া ভাষার প্রতীক হিসেবে সমালোচনা করায় তিনি ‘অ্যান্টি-হিন্দু’ এবং ‘অ্যান্টি-কন্নড়া’। তারা আর্টিকেল ২৫-এর অধীনে হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে পিআইএল দায়ের করে।

হাইকোর্টে প্রধান আবেদনকারী ছিলেন প্রাক্তন মহিষূর-কোডাগু এমপি প্রতাপ সিমহা, যিনি বলেছিলেন যে দশেরা একটি হিন্দু উৎসব এবং শুধুমাত্র হিন্দু ব্যক্তিই উদ্বোধন করতে পারেন। অন্যান্য আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন গিরিশ কুমার টি., সৌম্যা আর এইচএস গৌরব। তারা দাবি করেছিলেন যে মন্দিরে প্রবেশ এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য মুস্তাকের যোগ্যতা নেই, কারণ এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ।

Advertisements

হাইকোর্টের বিভাগীয় বেঞ্চ, চিফ জাস্টিস ভিবু বকরু এবং জাস্টিস সি.এম. জোশির নেতৃত্বে, এই যুক্তিগুলি খারিজ দিয়েছিল। তাদের মতে “একজন নির্দিষ্ট ধর্মের ব্যক্তির অংশগ্রহণ অন্য ধর্মের উৎসবে কোনো সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে না।” আদালত উল্লেখ করেছে যে ২০১৭ সালে কবি নিসার আহমেদকে একইভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং সকল ধর্মের মানুষ এই উৎসবে অংশ নেয়।

সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল যে হাইকোর্টের রায় ভুল, কারণ দশেরার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ‘সিম্বলিক’ নয় বরং আর্টিকেল ২৫-এর অধীনে সুরক্ষিত ‘অপরিহার্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান’। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এই আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেছে যে ভারতের সংবিধান বহুসংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে এবং দশেরাকে একটি রাজ্য-পৃষ্ঠপোষক উৎসব হিসেবে দেখতে হবে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে নয়। আদালত জানিয়েছে, “এটি একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র” এবং এই আমন্ত্রণ কোনো সাংবিধানিক লঙ্ঘন করে না।

সুপ্রিম-নির্দেশে আপাতত স্বস্তিতে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, বলেছেন যে দশেরা সকলের জন্য এবং এটি চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর প্রতি সমর্পিত। শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ লাড বলেছেন, “সংবিধান কোথাও বলেনি যে বানু মুস্তাক উদ্বোধন করতে পারবেন না।” বানু মুস্তাক নিজেও আমন্ত্রণকে “চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি পূরণের সুযোগ” বলে বর্ণনা করেছেন।