মহিলা সভাপতির হাতে দায়িত্ব সঁপে ছক ভেঙতে চলছে পদ্ম শিবির? সুধা নামে শোরগোল

নয়াদিল্লি: বিজেপির দীর্ঘ সাড়ে চার দশকের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ পদে কোনো মহিলাকে সভাপতি হিসাবে দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি, দলের অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি নাম, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনা সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তবে কি এবার বিজেপির সভাপতি পদে বসতে চলেছেন কোনও মহিলা? যদিও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়, তবে দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বাতাসে ঘোরাফেরা করছে একটি নাম৷ সেই নামটি হল— সুধা যাদব।

Advertisements

এই সম্ভাবনা উত্থাপিত হওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কৌশল। বিজেপি নেতৃত্ব চাইছে, দলের অন্দর থেকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হোক—যে বার্তা মহিলাদের ক্ষমতায়ন, অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব এবং আসন্ন বিহার নির্বাচনে সামাজিক সমীকরণে প্রভাব তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের সমন্বয়ে যদি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে, তবে তা রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

   

সুধা যাদবের পরিচিতি
বিজেপির সর্বোচ্চ সাংগঠনিক কমিটি ‘সংসদীয় বোর্ড’-এ প্রথম মহিলা সদস্য হিসেবে জায়গা পাওয়া সুধা যাদবের নাম আজকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ২০২২ সালে তিনি এই বোর্ডে নিযুক্ত হন এবং তাঁর পেছনে রয়েছে অনেক রাজনৈতিক কারণ। এর আগে, সুষমা স্বরাজ ছাড়া, অন্য কোনো মহিলা বিজেপির এই বোর্ডের সদস্য ছিলেন না। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং রাজনৈতিক প্রভাব গত কয়েক বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিশেষত দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি স্বীকৃত হয়েছেন।

সুধা যাদবের রাজনৈতিক যাত্রা
সুধা যাদবের রাজনীতির শুরু ১৯৯৯ সালে, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হরিয়ানার পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সুধাকে মহেন্দ্রগড় আসনে প্রার্থী করেন। জীবনের প্রথম নির্বাচনে সুধা যাদব বিপুল ভোটে জয়ী হন। কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহকে পরাজিত করেন। যদিও পরবর্তী দু’টি নির্বাচনে তিনি হেরে যান। তবে ২০১৪ সাল থেকে তাঁর রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়, যখন মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।

২০১৫ সালে সুধাকে বিজেপির ওবিসি মোর্চার কেন্দ্রীয় ইনচার্জ করা হয় এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত তিনি জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। সুধার স্বামী ছিলেন ভারতীয় সেনার সদস্য, যিনি কার্গিল যুদ্ধে শহিদ হন। তাঁর স্বামীর পরিবারের ভূমিকাও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিগণিত হয়।

সুধা যাদবের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি বিশেষ কারণে উল্লেখযোগ্য:

ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের স্থায়ীকরণ
বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই বর্ণহিন্দু ভোটব্যাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু ২০১৪ সালের পর, বিশেষত উত্তর ভারতে, দলটির ওবিসি ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী হয়েছে। সুধা যাদব এই ভোটব্যাঙ্ককে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হতে পারেন, যা বিজেপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisements

মহিলা ভোটব্যাঙ্ক
বিজেপি গত এক দশকে মহিলা ভোটের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। সংসদে নারীশক্তি বন্দন বিল পাশ করানো, বিভিন্ন রাজ্যে মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, এবং বিশেষ প্রকল্প চালু করা—এইসব পদক্ষেপ বিজেপির মহিলাদের প্রতি সমর্থনকে দৃঢ় করেছে। সুধাকে দলের সভাপতি পদে বসানো হলে, এটি মহিলা ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বিহারের যাদব ভোট
বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে সুধার নাম আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাদব সম্প্রদায়ের প্রতি তার সম্পর্ক এবং পরিচিতি বিজেপির বিহারের ভোটে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণে, বিজেপি যদি যাদব ভোটের প্রতি মনোযোগী হতে পারে, তবে তা তাদের অবস্থান শক্তিশালী করবে।

বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সুধা যাদবের নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে, বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হয়নি, এবং এটি পুরোপুরি নির্ভর করছে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের সিদ্ধান্তের ওপর। যদি সুধা যাদবকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, তবে তা বিজেপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মসূচির নতুন অধ্যায় শুরু করবে। 

এছাড়া, সুধার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সাংগঠনিক পরিসরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা—সবকিছু মিলিয়ে তাকে নিয়ে চলা আলোচনা আগামী দিনে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের একটি বড় অংশ হয়ে উঠতে পারে।

বিজেপির ইতিহাসে মহিলাদের ভূমিকা এবং সম্মান বৃদ্ধি পেতে পারে যদি সুধা যাদবের মতো একজন দক্ষ নেত্রী দলের শীর্ষ পদে বসেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুধা যাদবের এই সম্ভাব্য উত্থান শুধু দলের জন্যই নয়, বরং সমগ্র ভারতীয় রাজনীতির জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।