প্রতিবাদ, পাল্টা প্রতিবাদ এবং হাতাহাতি, এবং এখন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) বিরুদ্ধে এক পুলিশি মামলা—এমন পরিস্থিতি উত্তাল করে তোলে বৃহস্পতিবারের সংসদ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) “অম্বেদকর তো ফ্যাশন” মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে বিজেপি ও কংগ্রেস একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে। বিজেপির দাবি, কংগ্রেসের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী তার সমর্থকদের দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং শারীরিক সহিংসতার মাধ্যমে বিরোধীদের পার্লামেন্টে প্রবেশে বাধা দিয়েছেন। অপরদিকে, কংগ্রেস দাবি করেছে যে বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে।
কংগ্রেসের সঙ্গে বাড়ছে দূরত্ব, মমতার নেতৃত্বকেই সমর্থন তৃণমূল সহ ইন্ডিয়া’র
প্রতিবাদ ও পাল্টা প্রতিবাদ চলাকালীন, বিজেপির (BJP) দুই সাংসদ—প্রতাপ সরঙ্গি এবং মুকেশ রাজপুত গুরুতরভাবে আহত হন বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু। তার মতে, রাহুল গান্ধী এই হামলার জন্য দায়ী, এবং প্রশ্ন তোলেন, “কীভাবে তিনি পার্লামেন্টে শারীরিক সহিংসতা ব্যবহার করতে পারেন? কোন আইন অনুযায়ী তিনি অন্য সাংসদদের উপর আক্রমণ চালাতে পারেন?” কিরণ রিজিজু আরও অভিযোগ করেন, কংগ্রেস দল এবং তাদের নেতারা পার্লামেন্টের মধ্যে আইনগত সীমারেখা অতিক্রম করে অন্য সাংসদদের কাজে বাধা দিচ্ছে।
এই উত্তেজনা ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক নতুন তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে, যেখানে বিজেপি অভিযোগ করছে যে কংগ্রেস নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য সহিংসতা ব্যবহার করছে, আর কংগ্রেস পাল্টা বলছে যে বিজেপি দল দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে নষ্ট করার জন্য দলগতভাবে পরিকল্পনা করছে।
প্রতিবেশী দেশগুলিতে অস্থিরতা, অশান্তির আবহে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি ভারতের
অন্যদিকে, কংগ্রেস সাংসদরা অমিত শাহের “অম্বেদকর তো ফ্যাশন” মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, যা তারা ঐতিহাসিক এবং সামাজিকভাবে অত্যন্ত অবমাননাকর বলে মনে করছেন। তারা দাবি করছেন যে এই ধরনের মন্তব্য একদিকে জাতিগত বিদ্বেষ বাড়ায়, অন্যদিকে ভারতের সাংবিধানিক ও জাতিগত ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে অমিত শাহের মন্তব্য শুধুমাত্র অসত্য নয়, এটি ব্রাহ্মণবাদী চিন্তাধারা এবং জাতি বিভাজনের প্রণোদনাও।
এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস নেতারা বিজেপি সরকারের প্রতি একাধিক সমালোচনা করেন। তারা বলছেন যে, বর্তমান সরকার পার্লামেন্টের কার্যক্রমকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি, তারা অভিযোগ করেন যে বিজেপি সরকার দেশকে বিভক্ত করতে এবং একটি একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
২৬ হাজার চাকরি বাতিল! যোগ্য-অযোগ্য পৃথক করা সম্ভব? সুপ্রিম কোর্টকে যা বলল রাজ্য
এদিকে, বিজেপি দাবি করেছে যে, কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে এবং নিজেদের দুর্বল অবস্থানকে ঢাকতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের মতে, কংগ্রেসের নেতৃত্বের ভিতর বিভেদ এবং অসন্তোষ ছিল, যার ফলে এই ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
এই সময়ে পার্লামেন্টের মূল দরজার সামনে দুই দলের কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে তুমুল হাতাহাতি এবং তর্কবিতর্ক চলতে থাকে, যা পার্লামেন্টের কাজকর্মকে ব্যাহত করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে এবং সংসদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।