বিজেপিকে লক্ষ্য করে তীব্র আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi) । শুক্রবার দিল্লির ‘জওহর ভবন’-এ অনুষ্ঠিত ‘নেহরু সেন্টার ইন্ডিয়াট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ইতিহাস ও অবদানকে বিকৃত করার প্রচেষ্টাকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন।
সোনিয়া গান্ধীর বক্তব্যের শুরুতেই তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাজ ও অবদান নিয়ে সমালোচনা বা বিশ্লেষণ সবসময়ই স্বাগত। কিন্তু সচেতনভাবে তাঁর ভাবনা, লেখা এবং ইতিহাসকে বিকৃত করা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তাঁর কথায়, ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা নয়, বরং দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তিক কাঠামোও ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।
এই বক্তব্যে তিনি সরাসরি কোনও দলের নাম উল্লেখ না করলেও স্পষ্টভাবে বিজেপিকেই নিশানা করেছেন। সোনিয়া বলেন, “আজ যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম লক্ষ্যই হলো নেহরুকে কলঙ্কিত করা। শুধু তাই নয়, যে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর আমাদের দেশ দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা ধ্বংস করা তাদের চেষ্টার অংশ।” এ ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন দৃষ্টিকোণ এনে দিয়েছে, কারণ এটি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক চুপিচুপি ভেঙে সোনিয়া গান্ধী সরাসরি বর্তমান শাসকদলের নীতি ও কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতের সংবিধান, রাজনৈতিক কাঠামো এবং সমাজের বহুত্ববাদী চরিত্র গড়ে ওঠে নানা সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে কিছু রাজনৈতিক উদ্যোগ ও কার্যক্রম সেই ভিত্তিকে অগ্রাহ্য করছে। “আমরা যদি ইতিহাসকে বিকৃত হতে দিই, তাহলে শুধুমাত্র অতীতকে নয়, ভবিষ্যতেও আমাদের সন্তানরা তার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না,” মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক আক্রমণ নয়, বরং দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষার একটি বার্তা। সোনিয়া গান্ধী ভারতীয় গণতান্ত্রিক কাঠামো ও সংবিধানকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে যে অবস্থান বজায় রেখেছেন, তাতে এই বক্তব্য আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিজেপি শাসনকালে রাজনৈতিক ইতিহাস ও জননায়ক জওহরলাল নেহরুর অবদান নিয়ে যেভাবে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে, সোনিয়ার এই মন্তব্য তা চ্যালেঞ্জ করার স্পষ্ট ইঙ্গিত। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপিকে আক্রমণ করে সোনিয়ার এই মন্তব্য কেবল মধ্যম-শ্রেণি এবং যুবসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই নয়, বরং কংগ্রেসের ঐতিহ্য এবং নীতিমালা পুনর্ব্যক্ত করার প্রচেষ্টা হিসাবেও নেওয়া যেতে পারে। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে এই ধরনের কঠোর বক্তব্য দেওয়া কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশলকে নতুন করে তুলে ধরেছে।
এর পাশাপাশি, সোনিয়ার বক্তব্য সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেক ব্যবহারকারী তাঁর বক্তব্যকে ইতিহাস রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন, আবার কিছু রাজনৈতিক সমালোচক এটিকে কংগ্রেসের নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে বিশ্লেষণ করছেন। তথাপি রাজনৈতিক মহলে এটিকে সোনিয়ার এক শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি বর্তমান সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের ইতিহাস ও মূল্যবোধের সংযোগ স্থাপন করছেন।


