মোদী রাজ্যে বিজেপি-কংগ্রেস ধুন্দুমার সংঘর্ষ

গুজরাটের সুরাটে বিজেপি ও কংগ্রেস (BJP-Congress) কর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে উঠেছে। বুধবার বিহারের দারভাঙায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভোটাধিকার যাত্রা’-র মঞ্চ…

BJP-Congress clash in Gujrat

গুজরাটের সুরাটে বিজেপি ও কংগ্রেস (BJP-Congress) কর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে উঠেছে। বুধবার বিহারের দারভাঙায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভোটাধিকার যাত্রা’-র মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর প্রয়াত মা হীরাবেন মোদীর বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করা হয়।

প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীরা সুরাটে কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে, তবে এই ঘটনা গুজরাট ও বিহারের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

   

বিহারের দারভাঙায় রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ‘ভোটাধিকার যাত্রা’-র একটি সমাবেশে কংগ্রেস কর্মী মোহাম্মদ রিজভি ওরফে রাজা (২০) প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে অশোভন ভাষা ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার একটি ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, কংগ্রেসের মঞ্চে মোদীর বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই মঞ্চে রাহুল গান্ধী, তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের পোস্টার ছিল, যদিও ঘটনার সময় তাঁরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। দারভাঙা পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্ত রিজভিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে সুরাটে বিজেপি কর্মীরা শুক্রবার কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের সময় বিজেপি কর্মীরা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং কংগ্রেস কার্যালয়ের গেটে আঘাত করেন।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কংগ্রেস কর্মীরা পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখান, এবং উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে উভয় পক্ষের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিজেপি নেতারা এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ এবং ‘ভারতীয় সংস্কৃতির উপর আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “রাহুল গান্ধীর যাত্রার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের সীমা লঙ্ঘন করেছে।

কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধীর নামে চলে, কিন্তু এখন তারা গালিগালাজের রাজনীতিতে নেমেছে।” তিনি রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের কাছে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।

Advertisements

অন্যদিকে, কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে যে বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেন, “এই মন্তব্য বিজেপিরই একজন এজেন্ট করেছে, যাতে আমাদের যাত্রার জনপ্রিয়তা নষ্ট করা যায়। আমরা এই ধরনের ভাষার সমর্থন করি না এবং এটির নিন্দা জানাই।”

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেনুগোপাল বিজেপির বিক্ষোভকে ‘গুন্ডামি’ বলে সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের কার্যালয়ে হামলা গণতন্ত্রের উপর আঘাত। বিজেপি ভোটাধিকার যাত্রার জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে এই হামলা চালিয়েছে।”

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে অশোভন ভাষা ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি বিহারের সংস্কৃতির পরিপন্থী।” বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ রাহুল গান্ধীর কাছে ক্ষমা দাবি করে বলেন, “এই ধরনের নীচ রাজনীতি ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের আবেগের উপর আঘাত।”

এই ঘটনা বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কংগ্রেসের ভোটাধিকার যাত্রা নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে চলছে, যেখানে ৬৫ লক্ষেরও বেশি ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি এই যাত্রাকে ‘ঘুসপেটিয়া বাঁচাও যাত্রা’ বলে কটাক্ষ করেছে।

পুজোয় ভিনরাজ্য থেকে ঘরে ফেরার জন্য ১৫০টি স্পেশাল টেন ঘোষণা রেলের

সুরাটের এই সংঘর্ষ গুজরাটে বিজেপি-কংগ্রেস দ্বন্দ্বকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং আহতদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বিহারের নির্বাচনী প্রচারে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।