ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) বিরুদ্ধে একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছে। দলটির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেছেন যে, সোনিয়া গান্ধী ১৯৮৩ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার তিন বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৮০ সালে, ইতালীয় নাগরিক থাকা অবস্থায় ভারতের ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করেছিলেন।
এমনকি, জনরোষের মুখে ১৯৮২ সালে তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে ফেলা হলেও, ১৯৮৩ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় তাঁর নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়। এই সময়ও তিনি এখনও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাননি, কারণ তাঁর নাগরিকত্ব মঞ্জুর হয়েছিল ১৯৮৩ সালের এপ্রিলে। এই অভিযোগ ভারতের নির্বাচনী আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অমিত মালব্য সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “সোনিয়া গান্ধীর ভারতের ভোটার তালিকার সঙ্গে সম্পর্ক নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। এটি সম্ভবত রাহুল গান্ধীর অযোগ্য এবং অবৈধ ভোটারদের নিয়মিত করার প্রতি ঝোঁক এবং বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর বিরোধিতার কারণ ব্যাখ্যা করে।
তাঁর নাম প্রথমে ১৯৮০ সালে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়, যখন তিনি এখনও ইতালীয় নাগরিক ছিলেন এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব পাননি।”মালব্যর দাবি অনুযায়ী, সেই সময় গান্ধী পরিবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকারি বাসভবন ১, সফদরজং রোডে বসবাস করতেন। এই ঠিকানায় তখন নথিভুক্ত ভোটার ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, সঞ্জয় গান্ধী এবং মেনকা গান্ধী।
১৯৮০ সালে নয়াদিল্লি সংসদীয় আসনের ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়, যার যোগ্যতার তারিখ ছিল ১ জানুয়ারি, ১৯৮০। এই সংশোধনের সময় সোনিয়া গান্ধীর নাম পোলিং স্টেশন ১৪৫-এর সিরিয়াল নম্বর ৩৮৮-এ যুক্ত হয়। মালবিয়া দাবি করেছেন, এই নথিভুক্তি ছিল আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন, কারণ ভোটার হিসেবে নথিভুক্তির জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব অবশ্যই প্রয়োজন।
১৯৮২ সালে জনরোষের মুখে সোনিয়া গান্ধীর নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়। কিন্তু মালবিয়ার অভিযোগ, ১৯৮৩ সালে আবারও তাঁর নাম তালিকায় ফিরে আসে, এবার পোলিং স্টেশন ১৪০-এর সিরিয়াল নম্বর ২৩৬-এ। এই সংশোধনের যোগ্যতার তারিখ ছিল ১ জানুয়ারি, ১৯৮৩, কিন্তু সোনিয়া গান্ধী ভারতীয় নাগরিকত্ব পান ৩০ এপ্রিল, ১৯৮৩।
অর্থাৎ, তিনি নাগরিকত্ব পাওয়ার আগেই দ্বিতীয়বার ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করেন। মালবিয়া এটিকে “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্বাচনী কারচুপি” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন, কেন রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিয়ের ১৫ বছর পরেও তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি।
এই অভিযোগের পেছনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপির এই দাবি বিহারে চলতে থাকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে এসেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-কে “ভোট চুরি” বলে অভিহিত করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। বিজেপি এই অভিযোগের জবাবে সোনিয়া গান্ধীর ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ঘটনাকে তুলে ধরে কংগ্রেসের ইতিহাসে নির্বাচনী অনিয়মের প্রমাণ দাবি করেছে।
কংগ্রেস এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, বিজেপি ৪৫ বছর আগের একটি ঘটনা তুলে ধরে বর্তমানের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছে। তবে, তারা এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি।
অলিম্পিকের আগেই বড় ইভেন্ট আয়োজনের পথে ভারত? ছাড়পত্র দিল মোদী সরকার
এই বিতর্ক ভারতের রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিজেপির দাবি, সোনিয়া গান্ধীর ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ঘটনা কংগ্রেসের নির্বাচনী কারচুপির প্রমাণ। অন্যদিকে, কংগ্রেস এই অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে। তদন্তের অগ্রগতি এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া এই বিষয়ে আরও আলোকপাত করবে।